মদ, জুয়া, ইয়াবা, আইস, গাঞ্জা সবই হারাম। কিন্তু বিষয় হইলো আমাদের দেশে এগুলা খোরের সংখ্যা এতো বেশি যে গুইনা কূল করা যাইবো না। নেশাখোর কত এই দেশে? সরকার আম কাঁঠালের ফলনের হিসেব ভালো রাখে, কিন্তু নেশার খবর কম রাখে।
তবে এই দেশে বুড়া, পোলাপান অনেকেই এগুলা খায়। আমরা যারা ১৯৭১ এ তরুণ হিসেবে পার করছি তারা দেখছি, যুদ্ধের পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের স্মৃতি ভুলতে নেশা করতো। তাদের মনোরোগ ছিল। চিকিৎসা ছিল না তাই আশ্রয় চাইছে নেশার ঘরে। এখন আমাদের বয়সীরা সব ভুইলা যায়, এমনকি যুদ্ধ হইছিল সেইটাও।
যোদ্ধার নেশা?
আমাদের এক বন্ধু ছিল, অসাধারণ যোদ্ধা। জানুয়ারি মাসে ঢাকা, তারপর ইউনিভার্সিটি, চা, আড্ডা, নেশা এবং প্রেম। সবগুলাই সামলানো যেত, কিন্তু শেষটা বড় দাহ করে। যেই মেয়ে তার সাথে কদিন ঘোরাঘুরি করতো, কয়দিন পর তাকে ছেড়ে যেতো। সে ছিল নেশাখোর, আড্ডাবাজ, বেকার।এমনকি তার গায়ে তখন যোদ্ধার গ্লামারটাও লাগে নাই। আমার বোন এমন করলেও আমি খুশি হতাম।
তারপর আমার বন্ধুর নেশার মাত্রা বাড়তেই লাগলো, জীবনের লাগাম ঢিলে হতে থাকলো। ১০ বছর পর কেবল নেশাখোর পরিচয় ছাড়া তার আর কিছুই রইলো না। বাবার অবস্থা ভালো ছিল তাই ভাড়া তুলে জীবন কাটালো। বিয়ে, বাচ্চা কাচ্চা সবই হলো। কিন্তু নেশা ছাড়লো না। পরে ট্যাবলেটের বদলে মদ খেত।
এই লোক কি হারামখোর ছিল ? সে তো যুদ্ধেও গেছে, জান দিতে গেছে, কারো কোনো ক্ষতি করেনি। সে খারাপ না ভালো লোক? সে কি হারাম খায় ? তার এক বিন্দু রুজিও হারাম নয়। অতএব .. সে কি খারাপ না ভালো ?
যে মানুষটা সারা দিন রিকশা টানে আর রাতে এক পুড়িয়া গাঞ্জা টানে আর যে লোক কোটি টাকার বিজনেস করে লাখ টাকার মদ খায় তারা কি সমান পাপের বাক্স হাতে দাঁড়ানো ?
মদ আর চুরি?
প্রতিদিন মদ উদ্ধারের খবর পাই মিডিয়া থেকে। যাদের বাসা থেকে এইসব পাওয়া যায় তাদের অবশ্যই খারাপ ভাবা হচ্ছে। কিন্তু এই শহরে কত স্থানে খুব হালাল পরিবেশে মদ পাওয়া যায়, তার হিসেব কি আছে? কতগুলো বার আছে ঢাকায়? গত ১০ বছরে খুব কম বড়োলোক পেয়েছি যে মদ খায় না। তবে কিনা তাদের লাইসেন্স আছে -মানে হালাল? মদ কই খেলো সেটা তাহলে আসল কথা, কাগজ থাকলে হালাল ?
কিন্তু যে পরিমাণ দুর্নীতি, ঘুষ কেলেঙ্কারি, চুরি হয় এবং এসব নিয়ে মিডিয়াতে ফলাও করে প্রতিবেদনও ছাপা হয়, তার পিছনে আমরা তো পড়ে নেই? দুর্নীতি নিয়ে কথা বলবো না। কিন্তু কতবার মানুষ ভাবে ঢাকার এতো বিলাসী জীবন হারামের না হালাল টাকায় চলে? এখন কি ঘুষ খাওয়ার লাইসেন্স দেয়া হবে?
আসলে আমরা দুর্নীতিকে হারাম মনে করি না। আমরা বেশির ভাগ হাইল্লা মানুষ, গ্রামের কালচার মানি। মক্তবে মৌলভী সাহেব বলেছেন, মদ খাওয়া হারাম, তা নিয়েই চলছি। ঘুষ খাওয়ার কথা নিয়ে তো উনি তেমন কিছু বলেননি। গ্রামের মানুষকে গ্রামে শান্তিতে থাকতে দিন।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি