বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনকে কলঙ্কিত করতে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে।
ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) তিনি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ৬টায় দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অপরাধীরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সারাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিদিন অরাজকতায় লিপ্ত হচ্ছে। তারা গণপরিবহনে আগুন দেওয়া অব্যাহত রেখেছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
আরও পড়ুন: তারেক ও বিএনপিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তার অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ: রিজভী
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বা পুলিশ চেকপোস্টের কাছে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটার পর অপরাধীরা সহজেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এসব অগ্নিসংযোগ রোধে বা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে যে, দেশজুড়ে চলমান নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ক্ষমতায় থাকা অপশক্তি জড়িত।’
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের ‘ক্যাডার’ ও তাদের অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যানবাহনে আগুন দিচ্ছে বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে এবং পোড়া যানবাহনের চালক বা সহকারীদের বক্তব্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে পুলিশ বা ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা অগ্নিসংযোগের জন্য কীভাবে দায়ী।
বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অগ্নিসংযোগকারী কয়েকজনকে হাতেনাতে আটক করলেও পরে তারা ক্ষমতাসীন দলের সদস্য হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয় হয়।
সারাদেশে পুলিশ বা র্যাবের শত শত টহল দল এবং কয়েকশ প্লাটুন সশস্ত্র বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সুসংগঠিত পুলিশ টহল রয়েছে।
বাংলাদেশ এখন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এই পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে বিরোধী দলের সদস্যরা যে কোনো ধরনের সহিংসতা বা অগ্নিসংযোগ চালাতে পারে বলে দাবি করা হাস্যকর।
রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল উপস্থিতির উদ্দেশ্য হতে পারে আওয়ামী ক্যাডারদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে তারা অবাধে যানবাহনে আগুন দিতে পারে, জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে পারে এবং দেশে নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য রাস্তায় সহিংসতা করছে।
তিনি বলেন, ‘মানুষ হত্যা, জনগণের সম্পদ ধ্বংস, বিরোধী দলের উপর দোষ চাপানো এবং মিথ্যা মামলায় বিভিন্ন দল ও মতামতকে দমন করার নোংরা রাজনীতির আমরা ঘৃণার সঙ্গে নিন্দা জানাই।’
রিজভী দাবি করেন, মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৪৭৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে নতুন করে সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ তথ্য জানান।
গত ৩১ অক্টোবর থেকে বিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচির এটি ষষ্ঠ ধাপ।
তিনি বলেন, বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত অবরোধ চলবে।
রিজভী বলেন, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য এই অবরোধ।
আরও পড়ুন: বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অপপ্রচার একতরফা নির্বাচনের কৌশল: রিজভী
দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংকট চরমে, জনগণ প্রতিরোধ করতে প্রস্তুত: রিজভী