প্রবীণ নাগরিকের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করে দলের অসুস্থ চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে যত দ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সঠিক চিকিৎসা পাওয়া একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বেগম খালেদা জিয়া দেশের একজন প্রবীণ নাগরিক। সংবিধান তার জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করেছে।’
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দলের চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, দেশে যে রোগের চিকিৎসা করা যায় না, তার চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া সংবিধানকে উপেক্ষা করার শামিল।
বিএনপি নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমাদের নেত্রীকে (খালেদা) সংবিধানে দেওয়া চিকিৎসা সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা অন্যায্য, অমানবিক ও অসাংবিধানিক।’
তিনি বলেন, আইনের অজুহাতে গুরুতর অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই।
ফখরুল বলেন, দেশে বিএনপি চেয়ারপার্সনের চিকিৎসা অসম্ভব। ‘সরকার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আইনের অজুহাতে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন: খালেদাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষমতা রয়েছে সরকারের: আইন বিশেষজ্ঞরা
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে হত্যার পরিণতি কখনোই ভালো হতে পারে না। তাই আমরা আবারও সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আমাদের নেত্রীকে নাগরিক হিসেবে তার মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিন।
অন্যথায়, একজন গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় প্রবীণ নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার অস্বীকার করা এবং তার প্রতি অবৈধ, অমানবিক ও নিষ্ঠুর মনোভাব দেখানোর জন্য সরকার দায়ী থাকবে।
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তার জীবন বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে একটি ‘উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে’ চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে একটি আবেদন জমা দেন।
তবে, আইন মন্ত্রণালয় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছে পরামর্শ দিয়েছে যে তাকে প্রথমে কারাগারে ফিরতে হবে এবং এরপরই এই বিষয়ে অনুমতি পেতে আদালতে আবেদন করতে পারেন তিনি।
লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন বলে গত ৯ আগস্ট থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা।
সরকার খালেদাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী করতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, চিকিৎসকরা তাকে দেশেই সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে জোর করে বিদেশে নিয়ে যেতে পারি না। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়... আমরা বিশ্বাস করি জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিত হবে এবং তারপর তার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’
ফখরুল বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে ১০ বছরের সাজা ভোগ করে কারাগারে থাকা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা আ স ম আবদুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে যেতে দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, একইভাবে ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম ২০০৮ সালে ১/১১ সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। ‘এমন আরও উদাহরণ রয়েছে।’
লন্ডনে খালেদাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘অশালীন’ মন্তব্যের জন্য ফখরুল বলেন, এটা বর্তমান সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই... একজন দায়িত্বশীল প্রধানমন্ত্রী এমন অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে পারেন তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।’
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে মিথ্যা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী: ফখরুল
বিএনপি নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যও প্রমাণ করে যে তিনিই এই দেশের একমাত্র মালিক এবং তিনিই বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করেন। ‘তিনি আইন ও প্রশাসনের পরোয়া করেন না এবং সমস্ত অপকর্মের আদেশদাতা।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা অমানবিক ও প্রতিহিংসাপরায়ণ বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে এবং খালেদাকে বাদ দিয়ে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না। ‘এটা আমাদের স্পষ্ট অবস্থান। আমি আবার এটি পুনরাবৃত্তি করেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু।
আরও পড়ুন: খালেদার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি না দেওয়ায় সরকারকে ‘কাপুরুষ’ বললেন ফখরুল