দেশের স্বাধীনতার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারসহ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘৫২ বছর আগে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়ে ১৯৭১ সালে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু সেই গণতন্ত্র এখন দুর্ভাগ্যবশত সম্পূর্ণরূপে নির্বাসিত এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে।’
রবিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফখরুল এসব অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, দেশের জনগণের এখন ভোটাধিকার নেই, কথা বলার ও লেখার অধিকার নেই।
ফখরুল বলেন, ‘এখানে কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে একটি ঘৃণ্য চক্রান্ত করে ফ্যাসিবাদী একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: সরকারের নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করে ইসির চিঠি প্রত্যাখান ফখরুলের
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং গণতন্ত্র ও সকল হারানো অধিকার পুনরুদ্ধার করতে সর্বস্তরের জনগণ ও সব রাজনৈতিক দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ জেগে উঠেছে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, তাদের ভোট ও অন্যান্য অধিকার ফিরে পেতে এবং শান্তিতে বসবাসের আন্দোলন শুরু করেছে। সফলতা অর্জনের জন্য আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম এত বেড়ে গেছে যে মানুষ চরম অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে জনগণের টাকা লুট করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার দাম বাড়িয়েছে।
ফখরুল বলেন, তারা কোনো শর্ত ছাড়াই বিএনপি চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে এবং ৩৫ লাখের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ তাদের ১০ দফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করবেন।
বিএনপি মহাসচিব দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল ১০টার দিকে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে আসেন এবং ৫৩তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
আরও পড়ুন: রমজানে কর্মসূচি দিয়ে বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে
সেখানে তারা জিয়াউর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতও করেন।
এর আগে সকালে ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
তিনি বলেন, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন ও আশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। দুর্ভাগ্যবশত, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও, মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করছে এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে ‘স্বৈরাচারী সরকার’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মানুষ তাদের কথা বলার ও ভোটের অধিকার হারিয়েছে এবং সাংবাদিকরা সত্য লেখার অধিকার হারিয়েছে।
তিনি শোক প্রকাশ করেন যে তাদের দলের চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়া ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের’ আন্দোলন শুরু করার কারণে কারাগারে বন্দী হয়েছিলেন এবং ৩৫ লাখের বেশি বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিনা পরোয়ানায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করতে ডিএমপিকে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি
ফখরুল বলেন, এই স্বাধীনতা দিবসে তাদের দলের নেতা-কর্মীরা শপথ নিয়েছেন যে তারা ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে এবং ঘুরে দাঁড়ানোর আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বাংলাদেশ একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, দলের ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুর রহমান প্রমুখ। -উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে বিএনপি।
দিবসটি উপলক্ষে শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি।
১৬ মার্চ দলটি স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য ১০ দিনের একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে।
আগামী ২৭ মার্চ বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা শাখা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের গণসমাবেশ’ করবে।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে দলের বিভিন্ন ইউনিট ও সহযোগী সংগঠনও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।