বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারের অধীনে আমরা কোন নির্বাচনে যাব না, যাচ্ছি না। এটা আমাদের অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত। নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের কালিবাড়িস্থ নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশে কোন গণতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারি কর্মকর্তারা কি করছে তাদের হিসাব নিকাশও নেই। বর্তমানে যারা এমপি, চেয়ারম্যান আছেন তাদের কাজের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা যা খুশি তা করছে। এর ফলে আজ গোটা সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে। আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা যা করা দরকার সে কাজগুলো করে যাচ্ছে, জনগণের যে স্বার্থ সেটাকে তারা বিবেচনা করছে না। এজন্য তারা মুক্ত গণতন্ত্রকে বহু আগেই বিনষ্ট করে ফেলেছে।
আরও পড়ুন: শিগগিরই সরকারবিরোধী ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের রূপরেখা পেশ করা হবে: ফখরুল
ফখরুল বলেন, পুলিশের নতুন আইজিপি নিয়োগের ব্যাপারে আমাদের কোন মন্তব্য নেই। তত্ত্বাবধায়ক সকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি ও বিরোধীদলীয় যারা আন্দোলন করছে তারা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। এটা অত্যন্ত পরিস্কার করে বলছি বাংলাদেশের জনগণের যে, বেঁচে থাকা এটাই এখন কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন চাল, ডাল, তেল, লবণের যে দাম তো আকাশচুম্বি হয়েছেই সেই সঙ্গে অন্যান্য যে বিষয়গুলো আছে যেমন শিক্ষা। শিক্ষাক্ষেত্রে স্কুলে যারা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা যায় তাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। শিক্ষার উপকরণগুলোর দাম অনেকাংশে বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে একটা পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। একইভাবে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে একই অবস্থা। রোগীরা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পায় না। ওষুধের দাম বেড়েছে। কয়েকদিন আগে প্রায় ৫০টি ওষুধের দাম ৫৪ শতাংশ থেকে ১৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা মানুষের জন্য একটা ভয়ংকর একটা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি করে মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে ফেলা হয়েছে। মুল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রচণ্ডভাবে। আমরা এ লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেদিন থেকে তত্ত্বাবধায়ক বিধান বাতিল করা হয়েছে, সরকার যে সমস্ত আইনগুলো করেছে, সংবিধানে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তখন থেকেই ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। যখন একটি সরকার তার জনগণের সমর্থন হারায়। কিন্তু তারা রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে থাকে এবং তারা নির্বাচনও করে। তারা সেটিকে ম্যানুপুলেট করে। পুরোপুরি সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যায়। সেখানেই আমরা আন্দোলনগুলো করছি। আমরা গণতন্ত্রে ফিরে যেতে চাই। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ৭২ এ সংবিধান তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীকালে স্বৈরাচার এরশাদকে সরিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলাম। পরে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একইসঙ্গে আমরা বলেছি এ দেশের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন যদি না হয়, জনসাধারণ তাদের পছন্দের মানুষদের নির্বাচিত করতে না পারে তাহলে সমস্ত ব্যবস্থাগুলো ভেঙ্গে পড়বে।
মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্ত সাংবাদিকতা বহু আগেই আ’লীগ ধ্বংস করেছে। তারা বিভিন্ন আইনগুলো করেছে, এর মধ্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। সাংবাদিক হত্যা, নিপীড়ন চলছে। যার ফলে কেউ সাহস করে কেউ কিছু বলছে না, লিখছে না। যারা সুবিধাবাদী তারা ওই জায়গাগুলো থেকে সরতে চায় না। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের বিভিন্ন কিছু দিয়ে খুশি রাখা হয়েছে। তারা এ কারণে বলে এ ধরনের সরকারই ভাল। এ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। সেখানে বাংলাদেশ উন্নত দেশ কিভাবে করবেন, মধ্যম আয়ের দেশ কিভাবে করবেন। এগুলো সম্ভব না। এখানে তো কারও কোন নিরাপত্তা নাই। বিচার নাই। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। পুলিশকে দলীয়করণ করা হয়েছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে, ইউনিভার্সিটিকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এখানে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে ১২ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে। তাহলে সে কিভাবে শিক্ষা প্রদান করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
আরও পড়ুন: দমনপীড়ন এবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করবে না: ফখরুল