বিএনপির একদফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টন ও শ্যামলী এলাকায় কালো পতাকা হাতে পৃথক দুটি মিছিল করেছেন বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখার নেতা-কর্মীরা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ এক দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্যই এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।

এদিন বিকাল ৪টা ২০মিনিটে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর শাখার মিছিলের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দয়াগঞ্জে গিয়ে শেষ হবে।

কর্মসূচি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত ভাষণে এই নেতা বিএনপি নেতা-কর্মীদের দমন ও গ্রেপ্তারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তিরস্কার করেন।

তিনি বলেন, কিছু অশিক্ষিত লোক যারা দেশকে নয়, অর্থকে ভালোবাসে, তারা তাদের অপকর্ম ও দমনমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা জনসাধারণের সমস্যা নিয়ে রাস্তায় নামলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ওপর গুলি চালায় এবং তাদের হত্যা করে। ‘আপনারা কেন এমন করেন? আপনারা কি বিদেশি?’

তিনি বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ইউটিলিটি সেবার দাম কমানোর দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু সরকার তা করতে পারছে না। কারণ তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলেছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আর ক্ষমতায় থাকলে মানুষের টিকে থাকা খুবই কঠিন হবে এবং দেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।

ভারতের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশটি শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চায়। আমি তাদের বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার আহ্বান জানাতে চাই, কোনো সরকার বা দলের সঙ্গে নয়।

আব্বাস বলেন, গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে আগামী নির্বাচন একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে।

এদিকে, বিকাল ৪টার দিকে নগরীর শ্যামলী রিং রোডে ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির মিছিলের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হবে।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খসরু বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার শপথ নিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের পক্ষে তাদের অবস্থান থেকে কখনো পিছু হটেনি এবং তারা সব সময় বিজয়ী হয়েছে।

আরও পড়ুন: শুক্রবার ঢাকায় কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করে এই বিএনপি নেতা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বড় প্রতিনিধি দল নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে জনগণের বিপুল টাকা খরচ করেও ব্রিকসের সদস্যপদ পাননি।

খসরু বলেন, সেখানে বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক বৈঠকে হাসিনা 'নৌকার জন্য ভোট চেয়েছেন এবং বিএনপিকে গালিগালাজ করেছেন। তিনি বাড়িতে বসেই এটি করতে পারতেন, যেমনটি তিনি সবসময় করেন। তাহলে জনগণের টাকা খরচ করে তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের যৌক্তিকতা কী ছিল?

তিনি বলেন, সরকার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে নতুন খেলা খেলতে চাইছে। ‘এবার জঙ্গিবাদ নিয়ে কোনো খেলা চলবে না। আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী ও জঙ্গি দল। এই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও মিথ্যাবাদীদের ক্ষমতায় বসতে দেওয়া যাবে না।’

মিছিলে যোগ দিতে উভয় স্পটে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ভিড় করেন।

বিএনপি ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম অ্যান্ড পিপলস পার্টি, সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, লেবার পার্টি, এনডিএম, বাংলাদেশ সদর ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দুটি সংগঠন, গোয়েন্দা সংগঠন, এবি পার্টি, জনতার অধিকার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও এনডিপি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছে।

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর লক্ষ্য নিয়ে বিরোধী দলের এক দফা আন্দোলনের এটি পঞ্চম কর্মসূচি।

এর আগে গত ১৮ আগস্ট (গত শুক্রবার) বিএনপি ও সমমনা দলগুলো তাদের এক দফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করতে রাজধানীসহ সব মহানগরে গণমিছিল করে।

চলতি বছরের ১২ জুলাই বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো তাদের দাবি আদায়ে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়।

আরও পড়ুন: নিরপরাধ মানুষকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে পশ্চিমা ও ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সরকার: ফখরুল

সরকারের বিরোধী নির্মূল কর্মকাণ্ড আশঙ্কাজনক: ফখরুল