ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের উদ্ধৃতি দিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে সম্প্রতি প্রকাশিত সময় টিভির প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘বিএনপির ২৭ দফা ঘোষণায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা বলা হলেও তাদের নেতৃত্বের শীর্ষে আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্তদের রাখাকে ‘সাংঘর্ষিক ও নৈতিক অবক্ষয়’- ইফতেখারুজ্জামানের এই মন্তব্যে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সময় টিভিকে কটাক্ষ করেছেন এই বিএনপি নেতা।
ফখরুলের বক্তব্য তুলে ধরে, সময় টিভি বৃহস্পতিবার আবার আগের প্রতিবেদন প্রচার করেছে এবং প্রতিবেদনটির পিছনে তার অবস্থান এবং ন্যায্যতা রক্ষা করতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলায় মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এজেন্টের সাক্ষ্যের কথাও উল্লেখ করা হয়। .
সংবাদ সম্মেলনে সময় টিভি সম্পর্কে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান ও বেগম জিয়া সম্পর্কে ওই প্রতিবেদন সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাতের শামিল। যেহেতু আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, তাদের উচিত এই ধরনের প্রতিবেদন প্রচার করা থেকে বিরত থাকা।’
আরও পড়ুন: বরিশালে বিএনপির সমাবেশে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সংঘর্ষ
ফখরুল আরও স্বীকার করে বলেছেন, ‘চ্যানেলটি একটি মূলধারার সংবাদমাধ্যম এবং দেশের মানুষ বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে গ্রহণ করে।’
গত ১৬ জানুয়ারি ঢাকার নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত দলের সমাবেশ কভার করার সময় সময় টিভি’র এক সাংবাদিক তার ওপর ‘হামলা করার’ জন্য বিএনপিকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পর এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সময় টিভির ওই প্রতিবেদনেন বলা হয়, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া উভয়কেই আদালত সাজা দিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যাবতীয় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা সে বিষয়েও প্রতিবেদনে আইনের উল্লেখ করা হয়েছে।
এটিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের পর্যবেক্ষণও রয়েছে যে বিএনপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাহসী অবস্থান নেয়ার কথা বলছে এবং একই সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বে দণ্ডিতদের নিয়ে দল পরিচালনা করছে।
বিএনপির ২৭ দফার কথা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক এর আগে দলটির সেগুলো বাস্তবায়নের সামর্থ্য আছে কিনা তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির ইতিহাস এবং দেশের মানুষের সঙ্গে এর অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে বলা যেতে পারে যে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার তৈরি করে। তারা ক্ষমতায় এলেও চিত্র ভিন্ন। সেই অর্থে, এটি একটি ইচ্ছা তালিকা। যদিও উল্লিখিত অনেক বিষয় বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন: সরকারের দিন ঘনিয়ে আসছে: ফখরুল
২০১১ সালের নভেম্বরে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান এবং তার ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২০ দশমিক ৪১ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলায় এফবিআই এজেন্ট সাক্ষ্য দেন। এই প্রথম কোনো মার্কিন এফবিআই এজেন্ট বাংলাদেশের কোনো আদালতে সাক্ষ্য দিলেন।
এফবিআই-এর তত্ত্বাবধায়ক বিশেষ এজেন্ট ডেব্রা ল্যাপ্রেভোট, ঢাকার একটি আদালতের সামনে বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে তিনি পাচারের অভিযোগে তারেক রহমান এবং মামুনের সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ট্র্যাক করেছিলেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। পরে তিনি দ্বিতীয় দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন।
মহামারির মধ্যে, সরকার ২০২০ সালে ২৫ মার্চ এ একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তার জেলের মেয়াদ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। সরকার দুটি দুর্নীতির মামলায় তার শর্তসাপেক্ষ মুক্তির মেয়াদ কয়েকবার বাড়িয়েছিল।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ২৮ জানুয়ারি থেকে ৪ দিনব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা বিএনপির