চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (ফোরআইআর) নিয়ে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির উদ্যোগে ৪ ও ৫ নভেম্বর এ কর্মসূচি পালিত হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে উপমহাদেশে এটিই প্রথম কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি।
বুধবার (২ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সটি ৪ ও ৫ নভেম্বর রাজধানীর রমনায় অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। কনফারেন্সের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে যাত্রা এবং ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন'।
আবদুস সবুর বলেন, 'পরিবর্তনশীল বিশ্বে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের প্রায় সব দলীয় কার্যক্রম ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালনা করছি। শুধু তা-ই নয়, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা তৈরির মাধ্যমে মেধাবী তরুণদের কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এক কথায় বলতে গেলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দেশ ভালোভাবে প্রস্তুত রয়েছে।'
আরও পড়ুন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুবকদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
তিনি বলেন, 'কনফারেন্স থেকে যে সকল সুপারিশমালা আসবে সেগুলো দলের দপ্তরে এবং সরকাররের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেয়া হবে। যেন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বির্নিমাণে কার্যকর পদক্ষেপ রাখতে পারে।'
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দলটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রফেসর ড. হোসেন মনসুর, উপকমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্স উপলক্ষে গঠিত ১১টি উপকমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেশি-বিদেশি ৬৬২ টি গবেষণাপত্র থেকে বাছাইকৃত প্রায় ২৫০টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ফোরআইআরকে সফলভাবে কাজে লাগিয়ে দ্রুত অগ্রসরমান বাংলাদেশ ডিজিটালাইজেশনের মধ্য দিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে রোল মডেল হয়ে থাকবে। এই সম্মেলনে ফোরআইআর প্রযুক্তি ব্যবহারে সরকারের উদ্ভাবনী কর্মসূচি বাস্তবায়নে ও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে পেশাদার বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ,গবেষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত এবং চিন্তাভাবনা বিনিময় করতে পারবেন। যা ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ ও শতবর্ষী ডেল্টা প্লান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও পথ দেখাবে। এছাড়াও বর্তমান অবস্থান থেকে ভবিষ্যৎ স্বপ্নপূরণের পথ অনুসন্ধানে দেশি-বিদেশি প্রতিভাবানদের দলগত ব্রেইন-স্টর্মিং সেশনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবে।
আরও পড়ুন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী
সবুর বলেন, দ্বিতীয়, তৃতীয় শিল্প বিপ্লব আমরা ধরতে পারিনি। কিন্তু আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই সময়ে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারি সে লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের সঠিক দিক নির্দেশনায় এগিয়ে যাচ্ছি।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে দেশে বিভিন্ন স্থানে হাউটেক পার্ক স্থাপন করছে সরকার। উদ্যোক্তাদের সহায়তায় দেশে অনেকগুলো এক্সেলারেটর ও ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করেছে। এডভান্সড টেকনোলজিতে দেশের মেধাবী তরুনদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে গবেষকদের উৎসাহ ও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বুয়েট পোস্ট গ্রাজুয়েশন রিসার্চের জন্য বৃত্তি চালু করেছে। পিএইচডি প্রোগ্রামের গবেষকদের প্রতিমাসে ৪৫ হাজার টাকা করে,মাস্টার্স প্রোগ্রামে ৩০ হাজার টাকা করে বৃত্তি দিচ্ছে বুয়েট।
এছাড়াও টিচিং এসিস্ট্যান্ট ও রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রজেক্টে গবেষণার সুযোগ করে দিচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গবেষণা সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে সমন্বিতভাবে কাজ করলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব
দুই দিনব্যাপী আয়োজনে যা থাকছে:
৪ নভেম্বর সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সটির শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
প্রথমদিন বেলা সোয়া ১১ টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) অডিটরিয়ামে কনফারেন্সের প্রথম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বেলা ১২ টায় দ্বিতীয় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন থাইল্যান্ডের এআইটি'র বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. জয়শ্রী রায়।
দুপুর আড়াইটায় থেকে বিকাল ৫টায় পর্যন্ত আইইবিতে মোট ৯টি ভেন্যুতে আলাদা আলাদা টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
দ্বিতীয় দিন আইইবি'র কাউন্সিল রুমে সকাল ১০টায় তৃতীয় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার।
সকাল ১১ টা ২০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা আইইবিতে মোট ৯টি ভেন্যুতে আলাদা আলাদা টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ২ টা ২০ মিনিটে চতুর্থ এবং শেষ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আইইইই'র ইতিহাসের প্রথম বাঙালি প্রেসিডেন্ট ড. সাইফুর রহমান।
বিকাল ৩ টা থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপী মোট ৯টি ভেন্যুতে আলাদা আলাদা টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
আন্তর্জাতিক কনফারেন্সটির সমাপনী অনুষ্ঠান ৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
আরও পড়ুন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি: পরিকল্পনামন্ত্রী