করোনা পরবর্তী জটিলতায় আক্রান্ত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে মানবিক বিবেচনায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘করোনা পরবর্তী সমস্যা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। তিনি একজন বয়স্ক ব্যক্তি হওয়ায় অনেকগুলো স্বাস্থ্যগত জটিলতা রয়েছে ... এজন্য দেশের বেশিরভাগ মানুষ চান তিনি উন্নত হাসপাতালে চিকিত্সা সেবা গ্রহণ করুক।’
বিএনপি নেত্রীর গুলশান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে ফখরুল বলেন, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। আমরা আশা করি মানবিক কারণে সরকার তাকে দেশের বাইরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত
দেশব্যাপী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বিএনপি কর্মী এবং নেতাদের ঈদ উপহার প্রদানের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি নেতা বলেন, করোনাভাইরাসে দেশব্যাপী কমপক্ষে ৪২৫ জন নেতা-কর্মী মারা গেছেন।
ফখরুল বলেন, গত ২৭ এপ্রিল থেকে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডাক্তাররা খুব আন্তরিকভাবে তাকে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। তবে তিনি যেরূপ স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাকে দেশের বাইরে উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: মৃদু জ্বরে ভুগছেন খালেদা, অবস্থা এখনও স্থিতিশীল: ডাক্তার
বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসভবনে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার দেখা করেন এবং খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনুমতি চেয়ে আবেদনপত্র জমা দেন।
৭৬ বছর বয়সী বিএনপি নেত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৭ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত সোমবার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় বিএনপি নেত্রীকে হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে তার এ সমস্যা দূর হয়েছে।
আরও পড়ুন: শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর: চিকিৎসক
ভর্তির একদিন পর ২৮ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
গত ১০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভের ফল আসে। তিনি ছাড়াও তার বাসার আট সদস্য করোনায় আক্রান্ত। ২৪ এপ্রিল খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় দফা করোনা পরীক্ষাতেও ফলাফল পজিটিভ আসে।
দুর্নীতির মামলায় ২৫ মাস কারাভোগের পর করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে নির্বাহী আদেশে ছয় মাস দণ্ড স্থগিত হওয়ায় গত বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পান সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
একইদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পান তিনি এবং তখন থেকেই গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করছেন।
গত বছরের ২৭ আগস্ট আরও ছয় মাস এবং এরপর গত ১৫ মার্চ আরও ছয় মাসের জন্য তার তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠায় আদালত। পরে হাইকোর্ট তার সাজার মেয়াদ দ্বিগুণ করে। একই বছরে তিনি আরও একটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। যদিও তার দল বলছে, দুটি মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
খালেদার জন্য দোয়া
এদিকে, মির্জা ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশব্যাপী শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ধর্মের পবিত্রস্থানে ও তার সুস্থতা কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।