১৯৭১ সালের পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর নৃশংসতা ও দুঃশাসনের অনুকরণ করে সরকার শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য দেশে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
শনিবার (৪ নভেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, আরেকটি একতরফা নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকার বিএনপির 'শীর্ষ থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের' নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বল প্রয়োগ করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করছেন। ১৯৭১ সালের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭১ সালের দখলদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ও দুঃশাসনের অনুকরণ করছে। আওয়ামী লীগ এখন ১৯৭১ সালের পাকিস্তানপন্থী 'শান্তি' কমিটির মতো 'শান্তি' সমাবেশ করছে।
আরও পড়ুন: বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে: রিজভী
বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে না পেয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, আজকের আওয়ামী পুলিশ সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করছে। ছেলেকে না পেলে তার ভাইকে নিয়ে যাওয়া হয়, ভাইকে না পেলে তার বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সারা দেশ থেকে প্রতিনিয়ত এ ধরনের অমানবিক খবর আমাদের পেতে হয়।
রিজভী বলেন, জাতি এখন নতুন মডেলের কাল্পনিক মামলা দেখতে পাচ্ছে। মামুন নামে এক যুবদল নেতাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে বরিশালে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে মামলা করা হয়।
আরেক বিএনপি নেতা কঙ্কনকে একটি ট্রাকে পেট্রল বোমা নিক্ষেপের মামলায় অভিযুক্ত করা হয়, অথচ তিনি কারাগারে ছিলেন। তিনি বলেন, 'আপনারা সংবাদপত্রে এসব বিষয় উঠে আসতে দেখবেন। আমরা প্রায়ই গণমাধ্যমে এসব মজার গল্প ও কৌতুকের খবর দেখি ও শুনি।
আরও পড়ুন: আমীর খসরুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক বিএনপির
বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের দলের নেতা-কর্মীদের 'হাস্যকর' মামলায় নাম ও আসামি করে দমন-পীড়ন ও হয়রানি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'দেশের জাতীয় নেতাদের থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা অবর্ণনীয়ভাবে চলছে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও হত্যা করা হচ্ছে।
রিজভী বলেন, শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপির ১৭৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ এবং হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহে সারাদেশে ৫০৬টি নতুন মামলায় অন্তত ৭ হাজার ৭১৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, এ সময় পুলিশের গুলিতে ৫ হাজার ৭৮০ জন বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন এবং একজন সাংবাদিকসহ ৯জন নিহত হয়েছেন।
রিজভী দাবি করেন, কারাগারে সরকারের অসদাচরণের পাশাপাশি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ দলের নেতা-কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে অনিচ্ছুক, কারণ তিনি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার স্বাদ পেয়েছেন। ‘তিনি একতরফা নির্বাচন করবেন, এমনকি রক্তপাত হলেও।’
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু রবিবার
রিজভী নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে প্রধানমন্ত্রীকে তার গণতান্ত্রিক যোগ্যতা প্রমাণের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, জনগণই তার মূল শক্তি। তাহলে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করছেন না কেন? জনগণ যদি আপনাদের সঙ্গে থাকে, তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করে আপনারা ক্ষমতায় আসতে ভয় পাচ্ছেন কেন?
গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে 'নৃশংসভাবে' হামলা চালানোর পর নির্বাচনের আগে সরকার কেন বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘জনগণ যদি আপনার পাশে থাকে, তাহলে কেন আপনি এই ধ্বংসাত্মক ও রক্তাক্ত পথ অবলম্বন করবেন? জনগণ যে সরকারকে ভয় পায়, সেটি হলো স্বৈরাচারী সরকার। এর পরিবর্তে যে সরকার জনগণকে ভয় পায়, তা হলো গণতান্ত্রিক সরকার।’
আরও পড়ুন: খুলনায় বিএনপির ২০০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, আটক ১৫০