বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলেও ‘বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত’ সরকারের পতনের জন্য বিএনপির এক দফা আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘বিজয় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। রবিবার সকাল থেকে আমাদের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হবে।’
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা এ কথা বলেন।
এদিকে অবরোধ পালনের সময় সরকারের কোনো প্ররোচনায় সাড়া না দিতে বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: বিএনপির ঢাকা উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুলসহ ৪ জন গ্রেপ্তার: রিজভী
তিনি আরও বলেন, জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য তারা আন্দোলন করছেন, যাতে তারা নির্ভয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারেন।
তিনি বলেন, জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের জন্য এটি একটি আদর্শ আন্দোলন। যারা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে এবং স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে, তারা সবাই এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন করবে এবং এর সঙ্গে থাকবে।
রিজভী বলেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে গভীর রাতে ভোট কারচুপির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সংসদের সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
রিজভী বলেন, ‘তারা সাধারণ মানুষের জন্য ভালো কিছু করেনি।’
তিনি বলেন, ‘২৭২ কার্যদিবসের এই সংসদ আওয়ামী লীগের গুঞ্জনের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। গত পাঁচ বছরে এই অবৈধ পার্লামেন্টে প্রায় ১৬৫টি বিল পাস হয়েছে এবং এর প্রায় সবগুলোই গণবিরোধী। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে এই অবৈধ সংসদে গৃহীত অবৈধ আইনগুলো বুড়িগঙ্গা নদীতে নিক্ষেপ করা হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদের কার্যক্রম পরিচালনায় বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দল একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও প্রশাসন তাদের সব শক্তি নিয়ে মাঠে রয়েছে। আমরা সারা দেশ থেকে খবর পাচ্ছি যে, শেখ হাসিনা ও তার সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নতুন নোংরা মিশন শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় ২ কোটি সুবিধাভোগী ও কার্ডধারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও নেতারা প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি উপজেলায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধাপ্রাপ্তদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ডিসি, এসপি, ইউএনও ও ওসিরা বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করাই এসব সমাবেশের উদ্দেশ্য।’
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা।
রিজভী বলেন, জনগণকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে, আগামী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে না গেলে এই সুবিধা গ্রহণের জন্য তারা যে কার্ড ব্যবহার করেন তা বাতিল করা হবে।
তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে বিদেশিদের সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতি দেখানোর জন্য শেখ হাসিনা এই ভয়ানক কৌশল নিয়েছেন।’
রিজভী বলেন, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মাত্র ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপির ২৯২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সরকারের কোনো কৌশলই বিএনপির আন্দোলন দমন করতে পারবে না: রিজভী