১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানে শাসনামলে অনেক সৈনিককে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে বিচার ছাড়াই ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বিএনপির শাসনামলে নির্যাতনের কারণে দলের নেতাদের বিচার দাবিতে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এ দাবি করেন তথ্যমন্ত্রী।
১৯৭৫ ও ২০১৩ সাল পরবর্তী সময়ে বিএনপির হাতে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় দলটির নেতাদের বিচারের দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। বুধবার দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ দাবি জানান তারা।
২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার ভুক্তভোগীদের সংগঠন ‘অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ’ ও ১৯৭৭ সালে জিয়ার শাসনামলে বিনাবিচারে গণহত্যার শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের সংগঠন 'মায়ের কান্না' এ মানববন্ধন আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু পরিষদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৭ সালে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হয়েছিল। ঘুমন্ত সৈনিকদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোনো বিচার ছাড়াই জেল-ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এমনকি নামের মিল থাকায় একজনের বদলে আরেকজনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আবার এমনও ঘটনা ঘটেছে, বিচারের রায়ের আগেই ফাঁসির দেওয়া হয়েছে।
২০১৩ সালে বিএনপির আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় নিরাপরাধ সাধারণ মানুষকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে পোড়ানো হয়েছে। গাড়িতে পেট্রোলবোমা মেরে ট্রাক জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই নির্মমতার জন্য দায়ী বিএনপির নেতারা। তাদের বিচার হতে হবে।
২০১৪ সালে বিএনপির আন্দোলন থেকে ছোড়া আগুনে নিহত হন নাহিদ হাসান নামে একজন। তার মা রুনি বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে জ্যাকেট কিনতে ঢাকা এসেছিল। শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আগুনে পুড়িয়ে তাকে হত্যা করা হয়। বিএনপি-জামায়াত আমার ছেলেকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।’
তিনি বলেন, আমি আমার সন্তানকে দেখতেও পারিনি। ছেলে হত্যার বিচার চাই।
২০১৩ সালে রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, আমি সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলাম। জামায়াত শিবির হরতাল করতে গিয়ে আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাকে তারা নির্মমভাবে হত্যার চেষ্টা করে। হেলমেট, ইট, পাথর, লাঠি দিয়ে মারে। আমি সরকারের কাছে এই সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগের কোনো কথা বলেনি ইইউ: ওবায়দুল কাদের
‘মায়ের কান্না’র আহ্বায়ক কামরুজ্জামান লেলিন বলেন, জিয়াউর রহমান দেশের সামরিক বাহিনীর উপর গণহত্যা চালিয়ে ছিলেন। সৈনিকদের এক কক্ষে বন্দি করে রাখা, উলঙ্গ করে নির্যাতন করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। সেগুলোর নথিপত্র দেখলে সেই নির্মমতার চিত্র বোঝা যায়। সেই ঘটনার ৪০ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ এখনও বিচার পাইনি।
তিনি বলেন, এখন অনেকেই মানবাধিকারের কথা বলেন। অথচ আমরা কতটা মানবাধিকার বঞ্চিত সেটির দিকে কারো নজর নেই। আমরা আমাদের স্বজন হারানোর বিচার চাই।
মায়ের কান্না’র সদস্য আলেয়া বেগম বলেন, রাতে আমার স্বামী অফিসে যান। কিন্তু আর ফেরেননি। আমি জিয়াউর রহমানের কাছে যাই। কিন্তু তার গেটের পুলিশ আমাকে লাথি মেরে সরিয়ে দেয়। তিন মাস পর চিঠি দিয়ে জানায় আমার স্বামী জেলে মারা গেছে। তার মরদেহ পাইনি, কবরটাও দেখিনি কোনোদিন। আমার সন্তানরা তাদের বাবার মুখ দেখেনি। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
আরও পড়ুন: চিফ হিট অফিসারকে নিয়ে মন্তব্য: ঢাবিতে ফখরুলের কুশপুত্তলিকা দাহ