বুধবার রাজধানীতে সমাবেশের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যৌথভাবে ‘একদফা’ যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিবে।
দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করার কথা রয়েছে দলটির। এই জনসভা থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক দফা আন্দোলন শুরুর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, অন্যথায় আন্দোলনের মাধ্যমে পতন ঘটাতে হবে বলে বিএনপির অভিমত পোষণকারী ছয় দলের একটি প্ল্যাটফর্ম গণতন্ত্র মঞ্চ বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সভা করে এক দফা আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণের ঘোষণা দেবে।
আরও পড়ুন: সরকার ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাদের স্মার্টফোন হ্যাক করছে: ফখরুল
একটি পৃথক ১২-দলীয় জোট যেটি একইভাবে বিশ্বাস করে যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তারাও বেলা ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে একটি সমাবেশ থেকে অনুরূপ ঘোষণা দিবে। এদিন বিভিন্ন সময়ে বিজয়নগরে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, তেজগাঁওয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও গণফোরাম এবং মতিঝিলে পিপলস পার্টি এবং নয়াপল্টনে লেবার পার্টিরও একই ধরণের কর্মসূচি রয়েছে।
এছাড়াও গণ অধিকার পরিষদের দুটি বিভক্ত গ্রুপ (একটির নেতৃত্বে রেজা কিবরিয়া এবং অন্যটির নেতৃত্বে নুরুল হক নুর), গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট এবং সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে। বিকেল ৩টার দিকে এক দফা আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণের ঘোষণা দেবেন।
এসব দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপি পৃথক বৈঠক করে তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা চূড়ান্ত করেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত দলগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে এক দফা আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা দেবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি এই জাতীয় ঘোষণার মাধ্যমে জাতি আশাবাদী এবং উৎসাহিত হবে। এটি বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করতে আন্দোলনকে আরও তীব্র করতে সহায়তা করবে।’
আরও পড়ুন: শিগগিরই ৩৬টি দল একসঙ্গে সরকার পতনের যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করবে: বুলু
বিএনপি ও অনেক ছোট দলের নেতাদের সঙ্গে কথোপকথন থেকে ধারণা করা হচ্ছে এক দফা আন্দোলনের যৌথ ঘোষণায় আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া,একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন গঠনের দাবি থাকবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনৈতিক রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি, সকল গায়েবি মামলা প্রত্যাহার এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে সকল মিথ্যা মালা বাতিল এবং সংবিধান সংশোধন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করা হবে।
কিন্তু এগুলোর মধ্যে অধিক গুরুত্ব পাবে আগামী সংসদ নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয়, কার্যকর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে সোমবার এক কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাদের দল ও জোটের শরিকরা বুধবার তাদের বর্তমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সব দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ১২ জুলাই নিজ নিজ জায়গা থেকে নতুন যাত্রা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আরও পড়ুন: বিএনপির বুধবারের সমাবেশ থেকে বড় প্রত্যাশা ফখরুলের
এক দফা আন্দোলনের আগে ব্যাপক শোডাউন করতে দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিএনপি ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
মৌখিক 'অনুমতি' অনুসরণ করে এটি বিএনপিকে তাদের প্রস্তাবিত স্থানে সময়ের দুই দিন আগে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পৃথক নোটিশ জারি করেছে কেবলমাত্র বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার অনুমতি নিশ্চিত করেনি। নয়াপল্টন ও আওয়ামী লীগের পক্ষে খুব বেশি দূরে নয় বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে 'শান্তি সমাবেশ' করা হবে।
বিএনপি ঢাকা উত্তর মহানগর শাখার আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, তাদের সমাবেশ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ হবে এবং তা সফল করতে তারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে বুধবারের সমাবেশে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছে বিএনপি
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে আমাদের সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ঢাকাবাসী তাদের দাবি নিয়ে রাজপথে নামবে।’
আমান বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে তারা অনেক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেছেন। আমরা সহযোগিতা চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকেও চিঠি দিয়েছি।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে এক জনসভায় সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে বিএনপি।
বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো ১০ দফা আন্দোলনের ঘোষণার পর থেকে গত সাত মাসে সারাদেশে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, রোডমার্চ, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে যা এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আগস্ট মাসে শুরু হওয়া বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি ব্যাপক সাড়া ফেলে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার ও সামন্তবাদ পছন্দ করে: ফখরুল