বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘গোপন’ সম্পর্ক নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা বড় মিথ্যাবাদী’।
তারা (আওয়ামী লীগ) এতটাই ভীত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে যে তাদের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, পর্দার আড়ালে (যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে) একটি সমঝোতায় পৌঁছানোয় কোনো ভয় নেই। এর মানে আপনি স্বীকার করেছেন যে আপনি এত দিন ধরে ভয় পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-ভারতের কথায় মাথা ঘামানোর দরকার নেই: মির্জা ফখরুল
বুধবার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও গণতান্ত্রিক পেশাজীবী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বোঝাপড়ার কথা বলেছেন। ‘পৃথিবীতে আপনার মতো মিথ্যাবাদী খুব কমই আছে। আপনার মতো বড় মিথ্যাবাদী পৃথিবীতে আর পাওয়া যাবে না। আপনি গোয়েবলসকে ছাড়িয়ে গেছেন।’
তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে মিথ্যা দাবি করেছিলেন যে, ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা ও বৈঠক হয়েছে। ‘আমরা সবাই জানি, কীভাবে তারা (বাইডেন) ছবি তোলার জন্য দৌড়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বলেছেন, দিল্লি আছে, আমরাও আছি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। দিল্লি কি আপনাকে বলেছে যে আপনার অপকর্ম চালিয়ে যেতে হবে এবং নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন নেই? দিল্লি কি আপনাকে জোর করে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে বলেছে? তারপর বিষয়টি পরিষ্কার করে বলুন।’
আয়োজকরা জানান, সম্মেলনে সারাদেশ থেকে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার দেড় হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন।
ফখরুল বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, হামলা হলে তারা পাল্টা হামলা চালাবে না।
জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণকে রাজপথে নামতে উৎসাহিত করার জন্য পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘অশালীন’ মন্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা এই সত্যকে উন্মোচন করেছে যে, তার নির্দেশেই এ দেশে সবকিছু ঘটছে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেলেন মির্জা ফখরুল
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে তার (প্রধানমন্ত্রীর) বক্তব্য পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করেছে যে, এ দেশে বিচার বিভাগের কোনো প্রয়োজন নেই এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্তেরও প্রয়োজন নেই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও চরম ঔদ্ধত্যের বহিঃপ্রকাশ।
‘তিনি মনে করেন এই দেশ তার পৈতৃক সম্পত্তি। সর্বোপরি, তিনি মনে করেন তিনি অতুলনীয় হয়ে উঠেছেন। দেশে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই। তাহলে এত নাটক, প্রাণহানি, নির্যাতন আর এত নির্যাতনের কী লাভ? আপনি ঘোষণা করতে পারেন যে আমি এখন সম্রাজ্ঞী।’
বিএনপি নেতা বলেন, দেশ এখন ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসনের কবলে পড়েছে। ‘এই সরকার অবৈধ, কারণ এটি কোনো নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না। তারা অবৈধভাবে সংবিধান বিকৃত করে ক্ষমতা দখল করেছে।’
তিনি বলেন, সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন আয়োজনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দেশের জনগণ ও বিদেশিরা এর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাছাড়া যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চায়, তারা তাদের (আওয়ামী লীগ) বিশ্বাস করে না।’
ফখরুল আরও বলেন, তারা পরিষ্কারভাবে বলেছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে তারা তা মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে এই সরকার যখন পদত্যাগ করবে তখনই একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হবে।
আরও পড়ুন: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনের চেষ্টা করবেন না: মির্জা ফখরুল