জোটের শরিকদের মধ্যে বিরোধ বাড়ার জল্পনা-কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনকারীদের মধ্যে কোনো দুর্বলতা নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই যে আমাদের মধ্যে কোনো দুর্বলতা নেই এবং আমরা যুগপৎ আন্দোলনের গতি হারাইনি।’
রবিবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যদের মধ্যে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপি ও জোটের শরিকরা শনিবার সব নগর ও জেলা শহরে দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও, গণতন্ত্র মঞ্চ এ কর্মসূচি পালনে বিরত থাকে।
এক সাংবাদিক এ বিষয়ে ফখরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, সারাদেশে কখনো কখনো বিএনপির কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন করা হয়। তবে তাদের মধ্যে এবিষয়ে বোঝাপড়া আছে যে প্রতিটি দল চাইলে নিজস্ব কৌশলে কর্মসূচি পালন করতে পারবে।
আরও পড়ুন: সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস স্বাস্থ্য খাতকে ধ্বংস করার শামিল: মোশাররফ
তিনি বলেন, ‘তবে আমরা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং রাষ্ট্রের সংস্কারের মূল দাবিতে একমত হয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, এখন থেকে তাদের যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি কোনটি এবং কোনটি তাদের দলের নিজস্ব কর্মসূচি তা তারা স্পষ্ট ঘোষণা করবেন।
তিনি বলেন, মূলত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপর ভিত্তি করে তাদের আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা করা হবে।
শনিবারের অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ‘ক্যাডারদের’ হামলায় সারাদেশের বিভিন্ন জেলায়, বিশেষ করে খুলনা ও নাটোরে অনেক বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ‘বর্তমান আন্দোলন ও ভিন্নমতকে দমন করতে আমরা হামলা ও স্বৈরাচারী সরকারের দমনমূলক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।’
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, সরকার জনমতকে দমন ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করতে গত ১৪ বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যা এবং গ্রেপ্তার, দমন ও জেলে ঢোকাচ্ছে। ‘তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করছে, বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে।’
তিনি জানান, তাদের বৈঠকে প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার এবং সংবাদপত্রটির সম্পাদক মতিউর রহমানসহ অন্যান্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) মামলা দায়েরের নিন্দা জানানো হয়।
ফখরুল বলেন, বৈঠকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
এই বিএনপি নেতা বলেন, তাদের বৈঠকে ২৪ মার্চ রাজশাহীতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (রাব) হেফাজতে সরকারি কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইসির অনানুষ্ঠানিক আলোচনার আহ্বান বিএনপির প্রত্যাখান
তিনি বলেন, তারা চলমান যুগপৎ আন্দোলনের তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং তারা আন্দোলনের অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও জোরদার করার দিকে মনোনিবেশ করেছেন। যাতে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও অপ্রীতিকর নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণমুখী সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথের আন্দোলন তীব্রতর হয়।
রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, তারা যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণার বিষয়েও কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, তারা আশা করছেন খুব শিগগিরই তারা যৌথ ঘোষণা সম্পর্কে জানাতে পারবেন।
হাসনাত বলেন, আগামী দিনে কীভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে বর্তমান আন্দোলনকে আরও জোরদার করা যায় সে বিষয়েও তারা আলোচনা করছেন।
আরও পড়ুন: অবস্থান কর্মসূচির পূর্বে খুলনায় ১৬ নেতাকর্মী আটক: বিএনপি