বিএনপির মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করে সর্বস্তরের জনগণকে এতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যাতে করে আওয়ামী লীগকে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বার্তা দেওয়া যায়।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সরকার বা ক্ষমতাসীন দল যদি কোনো বাড়াবাড়ি করে বা সমাবেশে কোনো বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে তার জন্য দায়ী থাকবে সরকার।’
আরও পড়ুন: শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে: ফখরুল
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই নেতা এসব কথা বলেন।
নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতির জন্য প্রয়োজনে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে বলেও জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ডিএমপিকে চিঠি দেওয়ায় আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ করব।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নয়াপল্টনে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়ে ডিএমপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো চিঠি পায়নি বিএনপি। আমরা এখনও আশা করি, তারা (ডিএমপি) কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না এবং মহাসমাবেশে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সহায়তা করবে।’
তিনি বলেন, তাদের সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য চাপ সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের এক দফা দাবি মেনে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দেশে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কোনো সহিংসতার ভয় পায় না, কারণ তাদের দল অতীতে শান্তিপূর্ণভাবে একই ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে।
ফখরুল অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা লাঠি হাতে রাস্তায় নামার মতো বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, সরকার তার দমনমূলক নীতি ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে সমগ্র জনগণকে জিম্মি করার চেষ্টা করছে।
এমতাবস্থায় ভোটাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার এবং একটি মুক্ত ও বাসযোগ্য সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে সারা দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা আন্তরিকভাবে জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন শনিবারের মহাসমাবেশে যোগ দেয় এবং সরকারকে পদত্যাগ আর ক্ষমতায় না থাকার বার্তা দেয়।’
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার টিআইপিএস প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে: ফখরুল
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে লুটপাট ও বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
ফখরুল দাবি করেন, গত সোমবার থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৩৫০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৩৩০ জন বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, এ সময়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১৮টি ‘মিথ্যা মামলা’ দায়ের করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ছাড়া চলতি বছরের ২৭ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির ৪ হাজার ২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার, ৪১৮টি মামলায় ২৮ হাজার ৫৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং বিএনপির নয় নেতাকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) ব্রাসেলসে বলেছেন, খুব সুন্দর একটি নির্বাচন হবে, কারণ সরকার সেই নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। কিন্তু আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং প্রতি রাতে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আমাদের নেতাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, সরকার গুরুতর দমনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার যে, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া এ দেশের জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো ইচ্ছা নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘এ জন্য তারা বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই একতরফাভাবে নির্বাচন করতে সারাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু জনগণ জেগে উঠেছে। তাদের দাবি আদায় এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এবার রাস্তায় নেমেছে।’
বিএনপির পক্ষ থেকে ফখরুল ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে মালিকদের তা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: কোনো কিছুই ২৮ অক্টোবরের বিএনপির সমাবেশ বন্ধ করতে পারবে না: ফখরুল