মিয়ানমার ও ভারত সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ এখন ক্রসফায়ারের মুখে।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়।
দলটির স্থায়ী কমিটি বলেছে, আওয়ামী লীগ ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমর্থন নিয়ে এসব দেশকে বিভিন্ন 'অবৈধ অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক' সুবিধা দিয়ে ক্ষমতায় টিকে আছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, একদিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে ভারতের সীমান্তে আমাদের বিজিবি সদস্য ও লোকজন গুলিবিদ্ধ হচ্ছে, অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া ও মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। রাখাইন রাজ্য থেকে সেনারা পালিয়ে এসে (আমাদের দেশে) আশ্রয় নিচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন ক্রসফায়ারের মুখে।
বাংলাদেশ সীমান্তে বিরাজমান উত্তেজনার পেছনের কারণ কী হতে যাচ্ছে এবং কী হতে যাচ্ছে তা ভেবে দেখার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নানা ব্যর্থতা ও সমস্যা থেকে বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নও তোলেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, 'যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের গোপন সম্পর্ক আছে কি না... সরকার এর আগেও জনগণকে বিভ্রান্ত করতে একের পর এক ইস্যু তৈরি করেছে।’
মিয়ানমার সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে সীমান্ত সমস্যা সমাধানে সরকার প্রয়োজনীয় ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: জনগণের কাছে তওবা করে বিএনপিকে রাজনীতিতে আসার আহ্বান নানকের
বিএনপি বলেছে, মিয়ানমারের মতো দেশ কখনো বাংলাদেশে গুলি চালানোর সাহস পায়নি। এখন কেন তারা এটা করার সাহস পাচ্ছেন? এই বিষয়টি আপনাদের সকলকে ভাবতে হবে... কোথায় যাচ্ছে আমাদের দেশ?
তিনি সীমান্ত সমস্যার বিষয়ে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে বাধ্য করতে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের নাগরিকরা এখন যেভাবে চারদিক থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন, তা থেকে রক্ষা করতে হবে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তার সশস্ত্র বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র লড়াই, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সীমান্তে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার দুপুর পর্যন্ত মিয়ানমারের অন্তত ৩২৭ জন সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে, সোমবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপৈতলী গ্রামের রান্নাঘরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে এক বাংলাদেশি নারী ও এক রোহিঙ্গা পুরুষ নিহত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে গয়েশ্বর দাবি করেন, বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ‘ফ্যাসিবাদী সরকার নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ভারত, চীন ও রাশিয়াকে অবৈধ অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা দিয়ে তাদের সমর্থন নিয়েছে।’
তিনি বলেন, তাদের দল দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে। তিনি বলেন, ‘আমরা চলমান আন্দোলনে আছি। আন্দোলনের গতি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিকে রূপ নেয়।’
বিএনপি নেতা বলেন, বিরোধী দলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ নির্বাচন ও এর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করায় ৬২টি রাজনৈতিক দলের ৭ জানুয়ারি 'একতরফা' নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ও যৌক্তিক ছিল।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছে। ‘জনগণের এই স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন বিএনপির রাজনীতির সফলতা ও বিজয়ের বহিঃপ্রকাশ।’
গয়েশ্বর দাবি করেন, ৭ জানুয়ারির 'প্রহসনমূলক' নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ‘বরং অবৈধ, অনৈতিকতা ও অসাংবিধানিকভাবে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনের নামে জাতির সঙ্গে চরম প্রতারণা করা হয়েছে। ২০২৪ সালে ডামি প্রার্থী, ডামি পার্টি, ডামি ভোটার এবং ডামি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে একটি ডামি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
বিএনপির মতো পৃথিবীতে এমন কোনো রাজনৈতিক দল আছে কি না, যেখানে ৫০ লাখের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই প্রশ্নও তোলেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তার অনুগত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের ২ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে এবং প্রায় ৭০০ নিরীহ মানুষকে গুম করেছে। গয়েশ্বর প্রশ্ন তুলে বলেন, আসন ভাগাভাগির নির্বাচনের আগে ফ্যাসিস্ট সরকার কেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করল?
কারাগারে তাদের দলের ১১ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপির ৫০ লাখ নেতা-কর্মী তাদের জীবনে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তারা পুলিশ ও বিচার বিভাগের অবিচার ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির জন্য সরকারের সমালোচনা করেন তিনি।
গয়েশ্বর আরও বলেন, 'দেশের ১৮ কোটি মানুষ রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ শেখ হাসিনার দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। জনগণও আশা করে, বিএনপির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনবিরোধী ও ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে বিএনপির নেতৃত্বে রাজপথে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অচিরেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় বিপদাপন্ন হয়ে পড়েছে সীমান্ত : বিএনপি
নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত: প্রধানমন্ত্রী