সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সাম্প্রতিক দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সম্প্রতি গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দাবি করেন যে বাংলাদেশের বৃহত্তম ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুরা ধীরে ধীরে ‘নিরাপত্তার অভাবে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।’
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা আরও জানিয়েছেন, বাইডেনের কাছে দেওয়া চিঠিতে ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থান সম্পর্কে দেওয়া তথ্য ‘ত্রুটিযুক্ত অনুমান’, বিএনপি নেতাদের এধরনের তথ্য সমর্থন করার প্রবণতা, জাতীয় নির্বাচনের আগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
২০১৪ এবং তার আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘুদের ওপর বারংবার হামলার কথা উল্লেখ করে তারা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকেও দায়ী করেছেন।
মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠির বিরুদ্ধে তার আগের অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে এটিকে ‘সত্যের অপলাপ’ বলে অভিহিত করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেছেন: ‘১৯৭৭ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের ছত্রছায়ায় দেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির নীতিগুলো ধ্বংস হয়ে যায়’।
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের নেতৃত্বাধীন ধারাবাহিক সরকারগুলো সবাই পাকিস্তানপন্থী সাম্প্রদায়িক শাসনের প্রবর্তন করে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আলিঙ্গন করে একই পথ ধরে হেঁটেছে।’
দাশগুপ্ত বলেন, মানুষের অবশ্যই ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের অধীনে সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় হামলার ঘটনা বিবেচনা করতে হবে।
আরও পড়ুন: আরেকটি সাজানো নির্বাচন করতে সরকার পুলিশ ও জনপ্রশাসনে রদবদল শুরু করেছে: ফখরুল
তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে ঘটেছে।
বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা, শিক্ষাবিদ এবং যুদ্ধাপরাধ বিরোধী প্রচারকারীরা সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের অনুমান ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।
তারা আরও বলেছে যে এটি ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য হুমকি।’
মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতা আসার পর থেকে হিন্দু জনসংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে... শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু খ্রিস্টান জনসংখ্যাকেও নিপীড়ন করেছে; উপাসনালয় জ্বালিয়ে দেওয়া ও লুটপাট করা, যাজকদের কারাগারে বন্দী করা এবং ধর্মান্তরিত করার মাধ্যমে পরিবার ভেঙে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।’
আর্চবিশপ ইমেরিটাস প্যাট্রিক ডি'রোজারিও এর আগে বর্তমান সরকারের অধীনে বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে ‘নির্যাতিত’ হিসেবে চিত্রিত করার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন।
এই ধরনের বক্তব্যকে ‘ভুল’ বলে অভিহিত করে ঢাকার প্রাক্তন আর্চবিশপ জোর দিয়ে বলেছিলেন যে সরকার ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে।
প্রায় ২০০ বিশিষ্ট বাংলাদেশি আমেরিকানদের একটি দল একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে যে ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে।’
বাংলাদেশি আমেরিকানদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চিঠিতে ২০০১ সালের অক্টোবরের জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতাকে উপেক্ষা করা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বাধীন জোট হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যেসব হামলা করেছিল।’
আরও পড়ুন: ফয়জুল করিমের ওপর হামলার বিষয়ে সিইসি’র মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ফখরুলের
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে জামায়াত: গয়েশ্বর