আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি যাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে নয়াপল্টনে তাদের সমাবেশ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা এক মাস আগে নয়াপল্টনে আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছিলাম। কোনো রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই এর আগে এখানে বহু মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং, আমাদের চিঠি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন, কারণ আমরা এখানে আমাদের সমাবেশ করব। এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া আপনাদের দায়িত্ব।’
বুধবার এক সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে এই বিএনপি নেতা আশ্বস্ত করেন যে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোট ও অন্যান্য অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা শান্তিপূর্ণভাবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করবেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের বিরোধিতার বিষয়ে ফখরুল বলেন, চারিদিক দেয়াল ঘেরা অনুষ্ঠানস্থলে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে তাদের দল স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। ‘এখানে থেকে সহজে প্রবেশ করার এবং বেরিয়ে আসার কোন রাস্তা নেই। একটি মাত্র গেট আছে, যেখান দিয়ে দু-একজন লোক ঢুকতে পারে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতাদের কারাগারে রেখে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার: ফখরুল
এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তাদের দলকে শান্তিপূর্ণভাবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
অন্যথায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এই বিএনপি নেতা।
দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখা।
এর আগে মঙ্গলবার ২৬ শর্তে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
মিথ্যা মামলা বন্ধ করুন
ফখরুল বলেন, নয়াপল্টনে জনসভা হলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হবে বলে সরকার খোঁড়া অজুহাত দেখাচ্ছে। ‘শনিবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় এ ধরনের কোনো যানজটের সৃষ্টি হবে না।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, দেয়ালে লেখা ও জনগণের চোখের ভাষা বুঝতে চায় না বলেই সরকার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
এর পরিণতি বিবেচনা করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলা করা থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এখন জনগণও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই বানোয়াট মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার বন্ধ করে জনগণের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চলতে দিন।
আরও পড়ুন: তুলনামূলক সহজ পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির কুমিল্লা সমাবেশ
ঢাকা সমাবেশ চ্যালেঞ্জ
এই বিএনপি নেতা বলেন, ১০ ডিসেম্বরের জনসভা সফল করা ঢাকাবাসীর জন্য চ্যালেঞ্জ।
ফখরুল বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশের জনগণ নতুন আশা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটি (১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ) ঢাকা ও এই বিভাগের জনগণের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। ইনশাআল্লাহ সমাবেশ সফল হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার অকারণে বিএনপির সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। ‘এটা আপনাদের (সরকার) জন্য মোটেও ভালো হবে না। আপনারা পথ খোলা রাখছেন না। আমি আবারও আপনাদেরকে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলছি।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য সর্বস্তরের মানুষ এতে যুক্ত হওয়ায় বর্তমান আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, সারা দেশের মানুষের সংগ্রামে পরিণত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, সরকার ব্যাপক লুটপাটের মাধ্যমে শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, গোটা দেশ ও এর সব সেক্টরকে ধ্বংস করেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীকে ব্যবহার করছে।
আরও পড়ুন: ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে আ.লীগের ফাঁদে পা দিবে না বিএনপি: গয়েশ্বর