রাজ্জাকের বক্তব্য বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার ও জেলে রাখার সরকারের পরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, কারাবন্দী বিএনপি নেতাদের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা আব্দুর রাজ্জাক যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বোঝা যায়, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ এবং বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার করে জেলে রাখার মতো রাজনৈতিক সহিংসতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্বপরিকল্পিত।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব অভিযোগ করেন।
এসময় তিনি বলেন, বিচার বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আসন ভাগাভাগির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে বিএনপির ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সত্য প্রকাশ করেছেন।’
রিজভী বলেন, ‘মন্ত্রী আরও দাবি করেছেন, বিএনপিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করা হবে এবং তাদের সব নেতাকে রাতারাতি কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু বিএনপি তাতে রাজি হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তি প্রমাণ করেছে বিএনপির ২৮ অক্টোবরের জনসভা বানচাল করার পর পুলিশের সহিংসতা, হত্যা, মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তার ও বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের বাড়িতে চলমান অভিযান এবং গ্রেপ্তার বাণিজ্য শেখ হাসিনার পরিকল্পিত।’
বিএনপির জেষ্ঠ এই নেতা বলেন, রাজ্জাক অবশেষে স্বীকার করেছেন দেশের আইন, আদালত, বিচার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রযন্ত্র সবই আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে।
আরও পড়ুন: শুধু সরকারপন্থী দলগুলোই 'পাতানো' নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে: বিএনপি
তিনি বলেন, বিচার বিভাগ ও আওয়ামী লীগ একই সত্তায় পরিণত হয়েছে। দেশে আলাদা কোনো সত্তা নেই, কোনো আইন নেই... সবকিছু শেখ হাসিনার নির্দেশেই চলছে।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও দেড় লাখ মামলা হয়েছে। ‘সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কারাগারে হত্যা করে বিচার বিভাগের অস্তিত্ব ধ্বংস করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ আইন অনুযায়ী চলছে না, শেখ হাসিনার নির্দেশে গণভবনের নির্দেশ অনুযায়ী চলছে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জেল-জরিমানা ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক তার বক্তব্যের মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিচার বিভাগ, জনগণের বিচারের শেষ আশ্রয়স্থল, আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতাদের বিচার বিভাগে নিয়োগের পর থেকে কার্যত আওয়ামী লীগের একটি ইউনিটে পরিণত হয়েছে। ‘স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনের আওয়ামী মডেলের বিষয়টি কৃষিমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট।’
তিনি দাবি করেন, বিনা বাধায় ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ২০ হাজারেরও বেশি ‘নিরপরাধ’ বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে, তাদের জামিনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনার বর্তমান ‘স্বৈরাচারী’ সরকারের প্রশংসা করার জন্য সাংবাদিক ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরকে কটাক্ষ করেন রিজভী।
ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে (এফএসএ) এক সেমিনারে বক্তৃতায় এম জে আকবর হাসিনার প্রশংসা করে বলেন, তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিদাতা, কারণ তিনি স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছেন।
রিজভী বলেন, ‘যারা তার সম্পর্কে জানতেন তারা তার বক্তৃতা শুনে হতবাক হয়েছিলেন...এম জে আকবর অন্ধ ব্যক্তির মতো স্বৈরাচারের প্রশংসা গেয়েছেন। এম জে আকবরের মতো একজন বিচক্ষণ সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ ১৮ কোটি বাংলাদেশির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একজন স্বৈরশাসকের পক্ষে কথা বলতে পারেন কী করে?’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ জানতে চায় জনসমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা ভারতের কী স্বার্থ রক্ষা করছেন।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ একতরফা আসন ভাগাভাগির নির্বাচন করছে: খোকন
বিএনপিকে বিজয় দিবসের সমাবেশের অনুমতি দিতে গড়িমসি করছে পুলিশ: রিজভী