সাগরের উন্মত্ত জলরাশির স্পন্দনের সাথে একাত্মতা হওয়ার উচ্ছাস আর বালুকাবেলায় রোদ্দুরের সোনালী আলিঙ্গন। এর আরেক নাম সমুদ্র বিলাসী অভিলাষ, যা সযত্নে লালন করে চলে প্রতিটি সৈকতপ্রেমী। কেবল ফিসফিস করে অসীম দিগন্তের সূর্যের শেষ বিন্দু দেখার প্রশান্তি নয়, এখানে আছে অনন্তে হারিয়ে যাওয়ার আধ্যাত্মিকতা। এরই প্রাচুর্য ধরে রাখে পর্বত শিখরের মহান মন্দিরগুলো। এই ঐশ্বর্য্যের পসরা ছড়িয়ে থাকা বসতিগুলো যেন প্রত্যহ গেয়ে যায় জীবনের গান। এ গানের সঙ্গে ঐকতানে বাজে সাগরতলের জীববৈচিত্র্যের সুর। নৈসর্গিক কার্নিভালের এমন আয়োজনের দেখা মেলে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে। পর্যটনের জমজমাট বিপণীতে এখনো নিজের সপ্রতিভ উপস্থিতি ঘোষণা করে দ্বীপের আদিম পটভূমি। চলুন, দ্বীপাঞ্চলটির দর্শনীয় স্থানগুলোর পাশাপাশি জেনে নেওয়া যাক দ্বীপের যাবতীয় ভ্রমণবৃত্তান্ত।
বালি দ্বীপের ভৌগলিক অবস্থান
ইন্দোনেশিয়ার বালি প্রদেশের এই দ্বীপটি জাভা থেকে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার পূর্বে এবং বিষুব রেখা থেকে প্রায় ৮ ডিগ্রি দক্ষিণে অবস্থিত। জাভা ও এই দ্বীপের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে বালি প্রণালী। দ্বীপটির বিস্তৃতি পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় ১৫৩ কিলোমিটার এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ১১২ কিলোমিটার। প্রশাসনিকভাবে ৫ হাজার ৭৮০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য্যমন্ডিত এই দ্বীপ।
‘বালি’ নামকরণের ইতিহাস
রাজা শ্রী কেশরী ওয়ারমাদেওয়া ৯১৩ সালে এই দ্বীপের নাম দিয়েছিলেন ‘বালি’। এটি মুলত সংস্কৃত শব্দ বলি থেকে এসেছে যার অর্থ ত্যাগ, পুনর্জন্ম বা উৎসর্গ। এই শব্দটি এই অঞ্চলে আবিষ্কৃত বিভিন্ন শিলালিপিতে পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে একটি দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল সানুরের ‘ওয়ালি দ্বীপা’ শব্দ খোদাইকৃত ব্লাঞ্জং স্তম্ভ। এই শিলালিপির কাজটি করা হয়েছিলো ৯১৪ সালে রাজা ওয়ারমাদেওয়ার শাসনামলে।
আরও পড়ুন: কলকাতায় কেনাকাটার জনপ্রিয় স্থান
ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন ভিসা পাওয়ার উপায়
বালি দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার প্রথম শর্ত ইন্দোনেশিয়ার সিঙ্গেল বা মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা নেয়া। এই ভিসার আবেদনের জন্য যা যা প্রয়োজন হবে, তা হলো-
ভিসা আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সম্পূর্ণ পূরণকৃত ভিসা আবেদনপত্র (ফর্মটি পাওয়া যাবে এই লিঙ্কে https://kemlu.go.id/download/)
ইন্দোনেশিয়ায় আগমনের তারিখে কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদী পাসপোর্ট
বিগত ৬ মাসের মধ্যে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা একটি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি। সফ্ট কপি ১০০ থেকে ২০০ কিলোবাইটের জেপিইজি ফাইল হতে হবে
ফিরতি ট্রিপসহ ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার বিমান টিকেটের অনুলিপি
ভিসা ফি প্রদানের রশিদ
আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ হিসেবে গত ৩ মাসের মধ্যে কমপক্ষে ২ হাজার মার্কিন ডলারের তহবিলের প্রমাণ। বাংলাদেশি টাকায় এই তহবিল ২ লাখ ৩২ হাজার ৯৭৭ (১ মার্কিন ডলার = ১১৬ দশমিক ৪৯ বাংলাদেশি টাকা) টাকার সমতুল্য।
চিকিৎসা ব্যয় সঙ্কুলানের বিবৃতি পত্রসহ একটি ভ্রমণ বীমা
কোভিড-১৯ প্রোটোকল মেনে চলার বিবৃতি পত্র এবং টিকার সম্পূর্ণ ডোজ দেওয়ার প্রমাণপত্র
আরও পড়ুন: আইসল্যান্ড ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ভিসার মেয়াদ, ফি এবং আবেদন জমা
এই ভিসার মেয়াদ একক প্রবেশে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের জন্য বৈধ থাকে। ভিসার ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা। আবেদনের সমুদয় কাগজপত্র সহ ঢাকার ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের কনস্যুলার সার্ভিস কাউন্টারে জমা করতে হবে।
সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আবেদন জমা নেয়া হয়।
ইমেইল ঠিকানার (consular@indonesia-bd.org) মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া যায়।
বালি দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে রৌদ্রজ্জ্বল দিনগুলোতে বালি দ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময়। এই মৌসুমের ব্যাপ্তি এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত, তবে জুলাই ও আগস্টে পর্যটকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই এ সময় হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে যাবতীয় ভ্রমণ পরিকল্পনা অনেক আগে থেকে করতে হয়।
বালিতে আর্দ্র ঋতু থাকে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। ক্রিসমাস এবং নিউ ইয়ার ছাড়া বাকি সময়গুলোতে এখানে পরিব্রাজকদের চাপটা কম থাকে। তাই নিরিবিলিতে সমুদ্র বিলাসে যেতে হলে এই মৌসুমটাই উত্তম।
আরও পড়ুন: মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ