যে কোন আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য সরকার কর্তৃক ভ্রমণকারীর পরিচয় ও জাতীয়তা প্রত্যয়নকৃত নথি; অথবা খুব ছোট করে বলতে গেলে পাসপোর্টের সাথে ভিসার কথাটা সহসাই চলে আসে যেখানে ভিসা নামের এই অনুমতি পত্রটি একটি দেশ কোন বিদেশী নাগরিককে প্রদান করে থাকে সেই দেশে প্রবেশ ও একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে অবস্থান করার জন্য। একটি দেশে প্রবেশ ও অবস্থানের সময়সীমা সহ যাবতীয় নিয়ম-কানুন নির্ভর করে পাসপোর্টধারীর দেশটির উপর। কখনো এই নিয়মে খুবই কড়াকড়ি, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে একদম শিথিল। চলুন জেনে নিই, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা কোন কোন দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন।
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা মুক্ত দেশের তালিকা
ইন্টার্ন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির ডাটার উপর ভিত্তি করে হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স প্রতিবছর ২২৭টি গন্তব্যে ১৯৯টি পাসপোর্টের ভিসা প্রক্রিয়া যাচাই করে বিশ্বের দেশগুলোর র্যাংকিং প্রকাশ করে। ২০২১ এর সংস্করণ অনুসায়ী বাংলাদেশ-এর র্যাংকিং ১০৮-এ, যা গত বছরের তুলনায় ১০ ধাপ নিচে। এই র্যাংকিং-এ বাংলাদেশি বৈধ পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের মোট ৪০টি দেশে ভিসা ছাড়াই যাতায়াত করতে পারবেন।
তন্মধ্যে ১৯টি দেশে রয়েছে অন-অ্যারাইভাল ভিসা, অর্থাৎ গন্তব্যের দেশটিতে পৌঁছে প্রবেশের ঠিক আগ মুহুর্তেই আবেদন করে ভিসা পাওয়া যাবে। ইলেক্ট্রনিক ভিসা পাওয়া যাবে শুধুমাত্র এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায় প্রবেশের সময়। এছাড়া বাকি ২০টি দেশে প্রবেশের সময় কোন ধরনের ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
অন-অ্যারাইভাল ভিসার ১৯টি দেশ
আফ্রিকার ১৩টি দেশের মধ্যে রয়েছে মাদাগাস্কার, মৌরিতানিয়া, মোজাম্বিক, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সেশেলস, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, টোগো, উগান্ডা, কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জ, কোমোরস দ্বীপপুঞ্জ ও গিনি-বিসাউ।
এশিয়ার যে তিনটি দেশে পৌছার পর ভিসা পাওয়া যাবে সেগুলো হলো মালদ্বীপ, নেপাল, ও তিমুর-লেস্তে। আমেরিকার শুধু বলিভিয়াতে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যাবে। ওশেনিয়ার দেশগুলোর মধ্যে থাকছে সামোয়া ও টুভালু।
কোন রকম ভিসা কার্যক্রম ছাড়া ২০টি দেশ
আফ্রিকার ২টি দেশ গাম্বিয়া ও লেসোথো। এশিয়ার ২টি দেশ ভুটান এবং ইন্দোনেশিয়া,ক্যারিবিয়ান ১১টি দেশের মধ্যে থাকছে বাহামা, বার্বাডোস, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, ডোমিনিকা, গ্রেনাডা, হাইতি, জ্যামাইকা, মন্টসেরাট, সেন্ট কিট্স এবং নেভিস, সেন্ট ভিন্সেন্ট ও গ্রেনাডাইন্স এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগো। ওশেনিয়ার ৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে ভানুয়াতু, কুক দ্বীপপুঞ্জ, ফিজি, মাইক্রোনেশিয়া এবং নিউ।
আরও পড়ুন: ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট সেবা
বাংলাদেশি পাসপোর্টের সামগ্রিক অবস্থা
হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশের সাথে একই সারিতে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ কসোভো ও উত্তর-আফ্রিকার দেশ লিবিয়া। এই দেশ দুটিতেও বিশ্বের ৪০টি দেশে ভ্রমণের পূর্বে নিজেদের দেশে কোন রকম ভিসা সংক্রান্ত কর্মকান্ডের মুখোমুখি হতে হবে না।
বিগত দুই দশক জুড়ে বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থা বিবেচনা করলে পশ্চাদমুখী দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়। ফ্রি ভিসায় বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী দেশ ভ্রমণের সুযোগ ছিলো ২০১০ এবং ২০১৪ সালে। বিশ্বের মোট ৪২টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যেতো। বছর দুটিতে বাংলাদেশের র্যাংকিং ছিলো যথাক্রমে ৮৫ এবং ৮৬।
২০০৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো সর্বোচ্চ ৬৮তম। অবশ্য সে সময় হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্সের হিসেবকৃত গন্তব্যের সংখ্যা এখনকার (২২৭) তুলনায় অনেক কম ছিলো। ২৮টি দেশে ভিসা ছাড়া পার্মিট ছিলো বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের।
২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য ভিসা মুক্ত দেশের সর্বনিম্ন সংখ্যা ছিলো ৩৮ এবং বছরটি ছিলো ২০১৭। অন্যান্য বছরগুলোতে সংখ্যাটি ৩৯ থেকে ৪১ এ উঠানামা করেছে সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ এর সংখ্যাটিই (৪০) এ বছর আবার ফিরে এসেছে।
আরও পড়ুন: ১৩৯৩১ বাংলাদেশির বৈধ দ্বৈত পাসপোর্ট রয়েছে
শেষ কথা
ইন্টার্ন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির ডাটা মতে র্যাংকিং-এর দিক থেকে বাংলাদেশ ক্রমাগত পিছিয়েই চলেছে। ২০১২ থেকে ২০১৩ তে ৯৩ থেকে ৮৫তম স্থানে এসেছিলো। ২০১৫ থেকে ২০১৭ তে পর পর তিন বছরে র্যাংকিং ৯৯ থেকে ৯৬; অতঃপর ৯৫তে উঠেছিলো। ২০১৮ থেকে ২০২০ এর পরিসংখ্যানটাও একই। ১০০ থেকে ক্রমান্বয়ে ৯৮। কিন্তু ২০২১ সালের রেকর্ডটা গতছয় বছরের অল্প অল্প করে ওপরে ওঠার মাত্রাটাকে একদম ম্লান করে দিয়েছে।