গত ১ ডিসেম্বর ২০২১ সালের বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রা খরচের সূচক প্রকাশ করেছে বিখ্যাত মিডিয়া কোম্পানি ইকোনমিস্ট’র গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ (ইআইইউ)। এর মাধ্যমে উঠে এসেছে বসবাসের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরগুলোর নাম। জিনিসপত্রের দাম বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ, যা গত পাঁচ বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার। ফলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে বিগত ব্যয়বহুল শহরের তালিকায়। আর সেই ব্যয়বহুল শহরগুলোর তালিকা পাশাপাশি এর পেছনের কারণগুলো জেনে নিই।

আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ড ডে ট্যুর: একদিনে ঘুরে আসুন চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মহামায়া লেক

২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০ শহর

- তেল আবিব (ইসরায়েল)

- প্যারিস (ফ্রান্স) ও সিঙ্গাপুর (যুগ্মভাবে)

- জুরিখ (সুইজারল্যান্ড)

- হংকং

- নিউ ইয়র্ক সিটি, নিউ ইয়র্ক

- জেনেভা, সুইজারল্যান্ড

- কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক

- লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া

- ওসাকা, জাপান

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশের দশটি প্রাচীন মসজিদ: দেশের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন

তেল আবিব: ২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর

ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে ২০২০ এর যুগ্মভাবে শীর্ষস্থানীয় প্যারিস, হংকং ও জুরিখকে ছাড়িয়ে এখন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর। ২০২০ সালে শহরটি পঞ্চম অবস্থান ছিল।

ইসরায়েলি মুদ্রা শেকেলের দাম মার্কিন ডলারকে ছাড়িয়ে যাওয়াই তেল আবিবের উত্থানের মূল কারণ। সাথে পাল্লা দিয়ে অব্যাহত থেকেছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও যাতায়াত খরচের ঊর্ধ্বগতি।

আরও পড়ুন: টেকনাফ-সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু

বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার খরচের সূচক নির্ধারণ পদ্ধতি

ইকোনমিস্টের গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ (ইআইইউ) মূলত বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য ভিত্তিক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে পরার্মশ দিয়ে থাকে। যেমন, দেশের মাসিক প্রতিবেদন, পাঁচ বছর পর দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অবস্থা, দেশের ঝুঁকি বিশ্লেষণ ও ইন্ডাস্ট্রি প্রতিবেদন। এরই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা হলো বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার খরচের সূচক।

বিশ্বব্যাপী ১৭৩ শহরে ২০০ পণ্য ও পরিষেবার ৪০০ এরও বেশি পৃথক পৃথক মূল্যের তুলনামুলক অবস্থা; এই বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে  'ওয়ার্ল্ডওয়াইড কস্ট অব লিভিং (ডব্লিউসিওএল) সমীক্ষাটি করা হয় বছরে দু’বার- মার্চ ও সেপ্টেম্বর। পণ্য ও পরিষেবার মূল্যের তালিকা সংগ্রহ করার জন্য ডব্লিউসিওএলের গবেষকরা বিভিন্ন স্টোরের পাশাপাশি পরিষেবা প্রদানকারীর প্রতিষ্ঠানগুলোরও জরিপ করেন। সংগৃহীত দামগুলো প্রস্তাবিত খুচরা মূল্য বা প্রস্তুতকারকের খরচ নয়, সরাসরি ভোক্তাকে চার্জ করা মূল্য।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে দামী পানির বোতল অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মোদিগ্লিয়ানি

ডব্লিউসিওএলের অর্থনীতিবিদরা তুলনামূলক সূচকগুলো নির্ধারণের জন্য সর্বশেষ মুদ্রা বিনিময় হার এবং মান ব্যবহার করে মূল্যগুলোকে আদর্শ মুদ্রায় বা মার্কিন ডলারে রূপান্তর করেন। অতঃপর আইটেমগুলোকে পৃথকভাবে বিভিন্ন শ্রেণিতে প্রতিমান আরোপ করা হয় এবং প্রতিমানযুক্ত আইটেমের আপেক্ষিক পার্থক্য ব্যবহার করে একটি তুলনামূলক সূচক তৈরি করা হয়। এই সূচক নির্ণয়ের সুবিধার্তে শহরগুলোকে নিউ ইয়র্ক সিটির জীবনযাত্রার খরচের সূচকের সাথে তুলনা করে, যার প্রতিমাণ ১০০।

২০২১ এর বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার খরচের সূচকের বিশ্লেষণ

সূচকটির গণনা হয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটির জীবনযাত্রা মূল্যকে মানদণ্ড ধরে। সে অনুসারে মার্কিন ডলার অপেক্ষা অধিক মূল্যের মুদ্রার শহরগুলোকে ওপরের র‍্যাঙ্ক দেয়া হয়েছে।

এমন মুদ্রাস্ফীতির নেপথ্যে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বমূল্য। শতকরা ২১ ভাগ মূল্য বৃদ্ধিতে পুরো চাপটা পড়েছে পরিবহন খাতের ওপর। শীর্ষ ১০ শহরের মধ্যে হংকংয়ে পেট্রোলের দাম সবচেয়ে বেশি ছিল। প্রতি লিটার ২.৫০ ডলার। ব্র্যান্ডের সিগারেটের দাম বেড়েছে গড়ে শতকরা চয় দশমিক সাত ভাগ।

আরও পড়ুন: নেপাল ভ্রমণ: শত বছরের তীর্থস্থান ঘুরতে হিমালয়ের দেশে

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্ব জুড়ে আরোপিত বিধিনিষেধগুলো পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। যা চাহিদা অনুসারে পণ্যের ঘাটতি অতঃপর উচ্চমূল্যের দিকে ধাবিত করেছে। এর একটা বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের চাহিদার ওপর। পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার সাথে সাথে ক্রয় করার অভ্যাস পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বিনিয়োগকারীদের পশ্চাদপসরতায় অগত্যা মুদ্রার দাম বেড়ে যাচ্ছে।

২০২২ সাল নাগাদ অনেক শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। মূল্যস্ফীতি দরূণ মজুরি বৃদ্ধিকে ছাপিয়ে মাত্রা ছাড়াতে পারে জ্বালানির মূল্য। ইআইইউয়ের মতে বিশ্বব্যাপী ভোক্তা মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের গড় শতকরা পাঁচ দশমিক এক ভাগ থেকে কমে ২০২২ সালে গড়ে শতকরা চার দশমিক তিন ভাগ হতে পারে। যদিও তা সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় যথেষ্ট বেশি। যদি সাপ্লাই-চেইন ব্যাঘাত কমে যায় এবং কোভিড-১৯ জটিলতা উপশম হয়, তাহলে অধিকাংশ রাজধানীগুলোতে জীবনযাত্রার খরচ স্থিতিশীল হতে পারে। অতঃপর ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: সিঙ্গাপুর ভ্রমণ: সাগরের উপকন্ঠে অভিজাত উদ্যাননগরী