দেশের ৫৩তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে কসমস ফাউন্ডেশনের স্বনামধন্য শৈল্পিক শাখা গ্যালারি কসমস রাজধানীর কসমস সেন্টারের গ্যালারি কসমসে প্রখ্যাত শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সোম এবং ভবিষ্যৎ চিত্রশিল্পীদের নিয়ে দিনব্যাপী এক মনোজ্ঞ আর্ট ইভেন্টের আয়োজন করে।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ডিসেম্বরকে শ্রদ্ধা ও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের যুদ্ধশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে।

লাখ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি অনেক শিল্পঈ সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। শুধু যে যুদ্ধ তা কিন্তু নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করতে অব্যাহত ছিল তাদের শৈল্পিক প্রচেষ্টা। তাদের মধ্যে একজন ষটের দশকের অন্যতম উল্লেখযোগ্য চিত্রশিল্পী হিসেবে পরিচিত বীরেন সোম।

আরও পড়ুন: মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রদর্শনীর আয়োজন করছে গ্যালারি কসমস

তিনি ১৯৭১ সালে মুজিবনগর প্রেস, প্রচার, তথ্য ও সম্প্রচার অধিদপ্তরে নকশাকার হিসেবে কাজ এবং স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশের শিল্পকলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সংগঠক-লেখক-শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক ইউএনবি'র প্রধান সম্পাদক ও কসমস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এনায়েতউল্লাহ খান। আরও উপস্থিত ছিলেন- কসমস গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ খান, কসমস ফাউন্ডেশনের পরিচালক দিলশাদ রহমান, কসমস এডুকেশনের পরিচালক কেট জারো খান, গ্যালারি কসমসের শৈল্পিক পরিচালক শিল্পী সৌরভ চৌধুরী এবং আয়োজনটির মূল আকর্ষণ শিশু শিল্পীদের মা-বাবা।

এনায়েতউল্লাহ খান বলেন, ‘শৈশব আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় এবং আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি শিশু একজন শিল্পী। গ্যালারি কসমস প্রতি বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ডিসেম্বরে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল বিজয় দিবস উদযাপন করে। এ বছর আমার বহু বছরের চেনা দক্ষ ও সম্মানিত শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সোম, আর অবশ্যই আমাদের প্রতিশ্রুতিশীল শিশু শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দঘন দিনব্যাপী আর্ট ইভেন্টটি উপভোগ করছি।’

গ্যালারি কসমসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বীরেন সোম বলেন, ‘আজকের আর্ট ইভেন্টটি আমার জন্য বেশ আনন্দময়। কারণ, সবাই একসঙ্গে যুক্ত হতে পারে এমন এমন শিল্প উদ্যোগ আমরা সহসা দেখতে পাই না।এই শিশুদের ও তাদের ঝলমলে শিল্পকলা দেখে আনন্দ হচ্ছে। বিজয় দিবস উদযাপনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আমি গ্যালারি কসমসের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন: ঢাকায় সপ্তাহব্যাপী চায়না চিত্র ও ফটো প্রদর্শনী শুরু

মাসুদ খান বলেন, ‘শীত আমাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে এবং সম্পূর্ণে উৎসবের মৌসুম। আমাদের এই উৎসবের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিজয় দিবস, যা আমরা প্রতি বছর ডিসেম্বরে উদযাপন করি। নিয়মিত পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি আমাদের শিশুদের ইতিহাস শিখতে হবে এবং আজকের মতো আমাদের উদ্যোগগুলো সেই ধারণা নিয়েই।’

গ্যালারি কসমসে দিনব্যাপী এই আর্ট ইভেন্টের জন্য বীরেন শোম বেশ কয়েকটি জাঁকজমকপূর্ণ শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন এবং ভবিষ্যতের চিত্রশিল্পীরা আয়োজনটিতে অংশ নিয়ে আনন্দের সঙ্গে তাদের কল্পনাকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের থিমের ওপর ভিত্তি করে বড় ক্যানভাসে চিত্রিত করেন।

বিজয়ের চেতনা উদযাপনে দুই প্রজন্মের শিল্পীকে একত্রিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত এই আর্ট ইভেন্টে বিশিষ্ট শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সোমের কাছ থেকে শিশু শিল্পীরা গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের গল্প ও বিজয়ের মর্ম শেখেন।

এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বেশ কয়েকজন অভিভাবক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য গ্যালারি কসমসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ছেলে অক্ষরের সঙ্গে আসা নাজনীন বলেন, ‘এই আর্ট ইভেন্টের মাধ্যমে আমাদের শিশুরা কেবল রঙের সঙ্গেই খেলছে না বরং ক্যানভাসে তাদের সহজাত শিল্পীবোধও চিত্রিত করছে। যা আমাদের শিশু এবং আমাদেরকেও মুক্ত অভিজ্ঞতা দিয়েছে।’

মেয়ে বরিষ ধরা ও ছোট ছেলে বিসর্গ ধরাকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানে আসা শিল্পী তানিয়া সুলতানা বৃষ্টি ইউএনবিকে বলেন, ‘এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুরা দেশের বিজয় ও স্বাধীনতার তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তারা আমাদের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সোমের সঙ্গে তাদের শৈল্পিক অভিযান উপভোগ করতে পারছে।’

আরও পড়ুন: একুশে পদক ২০২৩ বিজয়ী কনক চাঁপাকে গ্যালারি কসমসের সংবর্ধনা