তারা হলেন- যশোরের কোতোয়ালী থানার হামিদপুর গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে শাহরিয়ার আজম আকাশ (২০), একই থানাধিন চাঁদপাড়া গ্রামের মো. মশিয়ার রহমানের ছেলে মো. মুশফিকুর রহমান (২১) ও হামিদপুর গ্রামের মো. আব্দুল লতিফের ছেলে মো. আহসান কবীর রনি (২০)।
র্যাব-৬ জানায়, প্রতারক চক্রটি অনলাইনে বিকাশে টাকা আদান-প্রদান, ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করা, মুভি/সিনেমা ডাউনলোড, ওয়েবসাইট ডিজাইন করে গ্রাহকদের ইউসি ব্রাউজার প্রমোট, অনলাইন বিজ্ঞাপন, ফেসবুকে নিজস্ব পেজ প্রমোট এ ধরনের নানা অফার দিয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো। এছাড়া ২৫০০টাকা, অনলাইন (2500taka, online) নামের এক ওয়েবসাইট খুলে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত করোনা পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের মাঝে ২৫০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অসহায়দের প্রেরণ করা হবে এমন ঘোষণা দেয় এ চক্রটি।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রওসোনুল ফিরোজ জানান, প্রতারক চক্রটি যশোরের শার্শা থানাধীন গোগা এলাকায় বিকাশের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণাকারী আকাশকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মুশফিকুর রহমান ও আহসান কবীর রনিকে আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে তিনটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর, পাঁচটি মোবাইল ফোন, ৮টি সিমকার্ড ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, ফেসবুক পেজ প্রমোটিংয়ের সময় দৈনিক টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বোকা বানিয়ে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য খুব সহজেই সংগ্রহ করে তারা। পরে ফেসবুকে বিনামূল্যে ৫০০ টাকা পাওয়া যাবে এ ধরনের একটি পোস্ট দেখে তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই মধ্যে শাহরিয়ার আজম আকাশ অনেক আগে থেকেই অনলাইন মার্কেটপ্লেস দারাজের রেজিস্ট্রেশন করা সেলার অ্যাকাউন্ট থেকে ‘ফ্রি ফায়ার’ নামে একটি অনলাইন-ভিত্তিক গেইমে ফ্রি কারেন্সি ডায়মন্ড বিক্রি করা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে তারা প্রায় ২৮ হাজার টাকার ডায়মন্ড বিক্রি করে। এরপর তারা আগের ক্রয় করা ডোমেইন ব্যবহার করে প্রতারণার জন্য ২৫০০টাকা, অনলাইন (2500taka, online) নামে ওয়েবসাইট ডিজাইন করে। তারা মাঝে মাঝেই এর ডোমেইন নাম পরিবর্তন করে যাতে পেজ প্রমোটিংয়ের সময় তাদের এ প্রতারণা সহজেই কেউ শনাক্ত করতে না পারে।
তারা জানায়, পেজটিতে করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দরিদ্রদের মাঝে ২৫০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের দেয়া হবে এমন ঘোষণার মাধ্যমে সরকারের এ উদ্যোগকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সহায়তার পাওয়ার জন্য কিছু তথ্য পূরণ করতে বলে তারা। তাতে নাম ঠিকানা ছাড়াও বিকাশের জন্য ব্যবহৃত ফোন নম্বর এবং পিন কোড দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। ওয়েবসাইটে গ্রাহক তথ্য পূরণ করার সাথে সাথেই তারা কম্পিউটারে গ্রাহকের বিকাশ নম্বর ও পিন কোড পেয়ে যেতো। পরে তা দিয়ে তারা কম্পিউটার থেকে দারাজে শাহরিয়ার আজম আকাশের খোলা অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটা করতো। পিন কোড দেয়ার পর বিকাশ ব্যবহারকারীর মোবাইলে একটি ওটিপি যেত। এ সময় পেজটি থেকে গ্রাহককে ২৫০০ টাকা পেতে হলে গ্রাহকের মোবাইলে আসা ওটিপি তাদের পেজের নির্ধারিত বক্সে প্রেরণ করতে বলা হতো। পেজের ওয়েবসাইটে ওটিপি দেয়ার সাথে সাথেই তারা দারাজে নিজেদের অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটা করতো। কেনাকাটা শেষ হলে সে নির্ধারিত সময় পর দারজকে পণ্য ডেলিভারি করা হয়েছে এবং তার ক্রেতাদের অ্যাকাউন্ট থেকে তা গ্রহণ করা হয়েছে দেখাতো। পরে দারাজ তার পণ্যের মূল্য অনুযায়ী তাদের দেয়া অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে দিত।
এভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে কেনাকাটার কাজ সম্পন্ন করে গত ২/৩ মাসে তারা প্রায় ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে র্যাবের কাছে স্বীকারও করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা।