এছাড়া ধর্ষণের আগে তরুণীর গলা ও কানের স্বর্ণালঙ্কার ও তার স্বামীর মানিব্যাগ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা।
গত শুক্রবার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ঘটা এ ধর্ষণের ঘটনায় শনিবার সিলেটের শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করেন ওই তরুণীর স্বামী। মামলার এজাহারে এসব অভিযোগ করা হয়।
এমসি কলেজের হোস্টেলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলার বাদী গত শনিবার দিবাগত রাত ৩টায় শাহপরাণ থানায় এজাহার দাখিল করেন। পরে এটি এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) করা হয়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক বিকাল ৫টায় তিনি স্ত্রীসহ প্রাইভেটকারযোগে হযরত শাহপরাণের (র.) মাজার জিয়ারতে যান। মাজার জিয়ারত শেষে পৌনে ৮টার দিকে এমসি কলেজের মূল ফটকের সামনে এসে পাকা রাস্তার উপর গাড়ি রেখে পাশের দোকানে সিগারেট কেনার জন্য নামতেই ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান মাসুমসহ আরও ২/৩ জন তার স্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকেন।
স্বামী এর প্রতিবাদ করলে সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর তাকে চড়-থাপ্পর মারতে থাকেন। তখন তার স্ত্রীও গাড়ি থেকে নেমে এর প্রতিবাদ করলে আসামিরা স্বামী-স্ত্রীকে ধমক দিয়ে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। এ সময় তারেকুল ইসলাম তারেক ড্রাইভিং সিটে বসে এবং স্বামী-স্ত্রীকে পেছনের সিটে উঠিয়ে সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর তাদের সাথে পেছনের সিটে ওঠে বসে। আর শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে। পরে তরিকুল ইসলাম গাড়ি চালিয়ে এমসি কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণের ৭ নং ব্লকের ৫তলা নতুন বিল্ডিংয়ের দক্ষিণপূর্ব কোণে খালি জায়গায় দাঁড় করায়। অন্যরা তখন মোটরসাইকেলযোগে পেছনে পেছনে ঘটনাস্থলে যায়।
এ সময় তরিকুল স্বামীর মানিব্যাগ থেকে দুই হাজার টাকা এবং শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি নববধূর কানের দুল ও অর্জুন লস্কর গলার সোনার চেইন কেড়ে নেয়। এ সময় চিৎকার করলে আসামিরা নববধূর মুখ চেপে ধরে।
পরে স্ত্রীকে গাড়িতে রেখে সাইফুর, তারেক রনি ও অর্জুন স্বামীকে ৭নং ব্লকের পশ্চিমপাশে নিয়ে যায়। এ সময় নববধূর স্বামীকে কথা বলায় ব্যস্ত রেখে সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম, মাহমুবু রহমান রনি ও অর্জুন লস্কর প্রাইভেটকারের ভেতরেই নববধূকে ধর্ষণ করে। তখন স্ত্রীর চিৎকার শুনে স্ত্রীকে বাঁচাতে চেষ্টা করতে গেলে আসামিরা তাকে মারধর করে ও আটকে রাখে।
এর আধঘন্টা পর তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে স্বামীর নিকট আসলে আসামিরা তার প্রাইভেট কার আটকে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে চলে যেতে বলে এবং ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে বলে। তখন তিনি স্ত্রীকে নিয়ে পায়ে হেঁটে কলেজ হোস্টেলের গেটে যান ও একটি সিএনজি অটোরিকশা ডেকে টিলাগড় পয়েন্টে গিয়ে পুলিশকে সব জানান।
এদিকে, ধর্ষণ করার সময় ৫তলা বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় বারান্দায় একজন ছেলে আসলে তাকে চলে যেতে বলে ধর্ষকরা। পুলিশের সহায়তায় বাদী পরে ৭নং ব্লকে তার গাড়িটি পুলিশকে দেখান এবং দ্বিতীয় তলার ছেলেটিকে শনাক্ত করেন। ছেলেটি তার নাম হৃদয় পারভেজ বলে জানায়। তখন হৃদয় পারভেজ জানায়, সে যখন বারান্দায় এসেছিল তখন তার রুমেমেট (মামলার ৩নং আসামি) শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রণি তাকে চলে যেতে বলে।
এ সময় হোস্টেলের অন্য ছাত্ররা মোবাইলে রনিসহ অন্য আসামিদের ছবি দেখায়। ভুক্তভোগী স্বামী-স্ত্রী ছাত্রলীগের ৬ জনকে শনাক্ত করেন এবং তাদের নাম ঠিকানা জানতে পারেন। অন্য আরও ২/৩ জন আসামির পরিচয় জানতে পারেননি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাদীর গাড়ি ও ধর্ষকদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। পরে পুলিশের সহায়তায় তার স্ত্রীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে এজাহার দায়ের করেন।
এ ঘটনায় তরুণীর স্বামীর দায়ের করা মামলায় আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা দায়েরের পর এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত চারজনসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুম ও তারেকুল ইসলাম তারেক এখনও পলাতক রয়েছে।
এ বিষয়ে শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশ সকল আসামিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’