রবিবার দুপুরে গাইবান্ধা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক আবদুর রহমানের আদালতে ১৩ দিন বয়সী মেয়েকে কোলে নিয়ে ভুক্তভোগী রোকসানা খাতুন বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
আরও পড়ুন: কন্যা শিশু জন্ম দেয়ায় তাড়িয়ে দিল স্বামীর পরিবার
স্বামী রাজা মিয়াকে প্রধান আসামি করে পাঁচ জনের নামে মামলা হয়েছে। এতে রাজার মা আছমা বেগম, বাবা মহব্বর আলী এবং ভাই আশরাফুল ও তার বউ আইরিন বেগমকে আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় লরি চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
গৃহবধূ রোকসানা খাতুনের পক্ষে মামলাটি লড়ছেন আইনজীবী হাসিবুল ইসলাম হ্যাপি।
তিনি বলেন, স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করাকালীন চারদিনের শিশুবাচ্চাসহ তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন দুই লাখ টাকা যৌতুক না পেয়ে রোকসানাকে নির্যাতন করে। নির্যাতনের সেই চিহ্ন রয়েছে তার শরীরে। যার ছাড়পত্র আমার হাতে এসেছে।
চারদিনের নবজাতকসহ মাকে বিতাড়িত করার খবরটি প্রচারের পর তোলপাড় শুরু হয়। এই অমানবিক ঘটনার দশ দিন পেরিয়ে গেলেও নবজাতকসহ মা রোকসানার পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। এমনকি স্বামীর স্বজনরাও নয়।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় প্রথম নারী সাংবাদিক আফরোজা ভাষা সৈনিক কার্জন আলী পদক পেয়েছেন
আদালতের বারান্দায় নবজাতককে কোলে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে গৃহবধূ রোকসানা খাতুন বলেন, ‘যৌতুক দিতে না পারায় ও (স্বামী) আমাকে ডিভোর্স দেয়। আমি আমার স্বামীর কঠিন শাস্তি চাই। আমার মতো কেউ যেন মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়ে এভাবে স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত না হয়। সেই সাথে কেউ যেন এভাবে নির্যাতনের শিকার না হয়। আমি যদি আমার সন্তানের পিতৃপরিচয় দিতে না পারি তবে আমি আমার স্বামী রাজা মিয়ার ফাঁসি চাই।’
রোকসানার মামা লুৎফর রহমান বলেন, ‘যৌতুকের জন্য আমার ভাগ্নিকে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। চারদিনের মেয়ে শিশুসহ তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মূলত মেয়ে জন্ম দেয়ার কারণেই তারা আমার ভাগ্নিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ছেলে জন্ম দিলে হয়তো বা তারা ভাগ্নিকে বাড়িতে উঠতে দিত, সংসারও হতো।’
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় মাদক মামলায় ১ জনের মৃত্যুদণ্ড
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ রোকসানা রংপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়। পরে ১১ মার্চ দুপুরে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোমামারা গ্রামে স্বামী রাজা মিয়ার বাড়িতে চারদিনের নবজাতকসহ যান গৃহবধূ রোকসানা খাতুন। কিন্তু কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে নবজাতকসহ ওই মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে ওই গৃহবধূ মেয়েসহ সুন্দরগঞ্জের বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়।