করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে সিলেটের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যাসংকট। একই সাথে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউতেও কোন বেড খালি নেই। রোগীর সংখ্যা আরও বাড়লে হাসপাতালগুলোতে সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানা যায়, গত তিনদিন ধরে সিলেটের ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আর গত ৪৮ ঘণ্টায় সিলেটে ৫২০ জন রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ কারণে সিলেটের সরকারি হাসপাতালের সাথে সাথে ঠাঁই মেলানো কষ্ট হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালেও।
এদিকে সিলেটে করোনা ডেডিকেটেড শহিদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালেও কোনো বেড খালি নেই।
আরও পড়ুন: করোনা: সিলেটে একদিনে শনাক্ত আরও ২৫৮, মৃত্যু ১
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার বিকাল পর্যন্ত ৯০ জন রোগী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯১ জন। এর মধ্যে ৪৩ জন পজিটিভ এবং ৪৮ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালটির ১৬ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ১৫ জন রোগী।
অন্যদিকে গুরুতর রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আইসিইউর জন্য রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়েছে। রোগীর স্বজনরা ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে।
শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বলেন, হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ। কোনো রোগী কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেই তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সেই খালি সিটে নতুন করে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। তবে আইসিইউতে সিট সংকট থাকায় করোনা পজিটিভ রোগী ছাড়া অন্য রোগীদের ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: লকডাউন: সিলেটে গণপরিবহন বন্ধ
সিলেটে করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় করোনা ডেডিকেটেড শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের পাশাপাশি সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার জন্য ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইসাথে হাসপাতালটিতে রয়েছে ১০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউ। যদিও বুধবার বিকাল পর্যন্ত ১০টি বেডের একটিও খালি ছিল না।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, করোনা রোগী বেড়ে যাওয়াতে চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালে দুটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের এখানে চিকিৎসা দেয়া হবে। এ জন্য শামসুদ্দিন হাসপাতালের উপর থেকে চাপ কমাতে উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রোগীদের ওসমানী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। তবে হাসপাতালে আইসিইউ মাত্র ১০টি রয়েছে। আরও ১০টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এদিকে সরকারি হাসপাতালের সাথে সাথে সিলেট নগরীর দুটি বেসরকারি হাসপাতালেও চলছে করোনা রোগীদের চিকিৎসা। তবে স্বল্প আয়ের মানুষেরা সরকারি হাসপাতালকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বেশি। কেননা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় নিম্ন আয়ের মানুষের সাধ্যের বাইরে। নগরীর আখালিয়ার মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে ৯টি আইসিইউ বেড। এছাড়া ২৬টি রয়েছে আইসোলেশন শয্যা। এর মধ্যে বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত কোনো বেড খালি নেই বলে জানান হাসপাতালের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট রাশেদুল ইসলাম।
দক্ষিণ সুরমার নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রয়েছে ১২টি আইসিইউ বেড। এছাড়া ওই হাসপাতালে মোট ৩০টির উপরে আইসিইউ বেড রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে একদিনে সর্বোচ্চ ২৩৪ জনের করোনা শনাক্ত
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চাপ বাড়ছে। তাই আমরাও আইসোলেশন শয্যা ও আইসিইউ বেডের সংখ্যাও বাড়িয়েছি। তবে বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত হাসপাতালের আইসোলেশন শয্যা ও আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই।
সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯৯ জনের দেহে। আর সুস্থ হয়েছেন ৯৯ জন এবং এসময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০ জন।
সিলেট বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মোট ৪৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৫ হাজার ৯৮১ জনের। আর মোট সুস্থ হয়েছেন ২৩ হাজার ৬৭২ জন। আর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩৬৮ জন।