উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জন-জীবন।
গত মঙ্গলবার থেকে জেলায় দেখা মিলছে না সূর্যের। দিন ও রাতে বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা।
শুক্রবার (১২জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, ঠান্ডার প্রকোপে কুড়িগ্রামে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত নানান রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা।
শীতের রোগীর কারণে বাড়তি চাপ সামলাতে দেখা যায় হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকদের। শয্যা সংকটে হাসপাতালের মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে সূর্যের দেখা মেলেনি ২ দিন, বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৭ জনসহ শিশু বিভাগে শীতজনিত রোগে মোট ৬২ জন ও ডায়রিয়া বিভাগে নতুন ৩১ জনসহ মোট ৫৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
শিশু বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া অভিভাবক মো. ফরিদ শেখ বলেন, ‘আমার দেড় বছরের বাচ্চাটা গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে সর্দি বের হচ্ছে ও বমি করছে। সকালে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম, চিকিৎসা চলছে।’
আরেক অভিভাবক লিপি বেগম বলেন, ‘গতকাল বিকালে হাসপাতালে আসছি। ঠান্ডার কারণে বাচ্চাটার জ্বর-সর্দি । কয়েকদিন থেকে ঠাণ্ডার প্রকোপ একটু বেশি।’
হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স মোছা. জুলেখা বেগম বলেন, ‘গত ৩ দিনে হাসপাতালের শিশু বিভাগে আর ডায়রিয়া ওর্য়াডে নতুন অনেক রোগী ভর্তি রয়েছেন। ঠান্ডার কারণে রোগ বাড়ায় আমাদের প্রতিদিন রোগীর চাপ সামলাতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তীব্র শীতে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহীনুর রহমান সরদার বলেন, ‘এ জেলাটি হিমালয়ের কাছে হওয়ায় এখানে ঠান্ডার প্রকোপ একটু বেশি। হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন অধিকাংশই চরাঞ্চলের মানুষ।’
সরকারিভাবে ১ মাস আগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও সেটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে জানান সাধারণ মানুষ। তারা গরম পোশাকের অভাবে সড়কের পাশে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
জেলার কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, ঘন কুয়াশার এ দাপট আরও ২-৩ দিন অব্যাহত থাকবে। যার ফলে সূর্যের দেখা পাওয়া কষ্টকর হবে। আগামী সপ্তাহে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।
জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘ইতোমধ্যে জেলার ৯ উপজেলায় ৪২ হাজারের বেশি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আপাতত আমাদের কাছে কোনো মজুত নেই। আমরা ৩০ হাজার কম্বলের চাহিদা পাঠিয়েছি।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশার দাপট কিছুটা কমলেও অনুভূত হাড় কাঁপানো শীত