জ্বলন্ত চুলায় লাকড়ি দিয়ে চার-পাঁচটি মাটির খোলায় চিতই পিঠা বানাচ্ছেন নুরুজ্জামান নুরু। চুলার অল্প আঁচে উড়ছে ধোঁয়া। তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু চিতই। আর চুলা থেকে নামানোর পর মুহূর্তেই তা চলে যাচ্ছে অপেক্ষামান ক্রেতার হাতে। ক্রেতারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সেই পিঠা কিনছেন। কেউ বা নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের জন্য। কেউ আবার দাঁড়িয়েই খাচ্ছেন।
পাশের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে ব্যস্ত নুরুর বড় ভাই রুহুল আমীন। রাস্তার পাশে এই দুই ভাইয়ের দোকানে অর্ধশত মানুষ পিঠা কেনার জন্য ভিড় জমিয়েছেন। খুলনা মহানগরীর শান্তিধাম মোড়স্থ জাতিসংঘ শিশু পার্কের পশ্চিম পাশে প্রতিদিনি সন্ধ্যায় এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।
নুরুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর শীত মৌসুমে এলে পিঠা বিক্রি করি। এবার প্রায় ১৫-২০ দিন হয়েছে চিতই পিঠা বিক্রি শুরু করেছি। পাঁচ টাকা করে প্রতি পিস। বিক্রিও খুব ভালো।
মামুন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুর দোকান থেকে পিঠা কিনে প্রশংসা করে বলেন, এখানকার পিঠার মান ভালো। তাই প্রতিবছরই কিনে থাকি। এবারও কিনেছি।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে পুনাক পিঠা মেলায় মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
সোলেমান নগরের প্রবেশপথে পাশাপাশি দুই দোকানে পাটিসাপ্টা, ভাপা, পুলি, তেলের পিঠা ও চিতই পিঠা বিক্রি করছেন রফিক এবং সাহানারা। রফিক জানান, পুলি পিঠা ১০ টাকা পিস, পাটিসাপ্টা ১৫ টাকা ও পাঁপড় তিন পিস ১০ টাকায় বিক্রি করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পিঠা তৈরির ছাঁচে চালের গুঁড়ি নিয়ে তার ওপর গুড়, নারকেল ছিটিয়ে ভাপে দিচ্ছেন দোকানি। খোলায় বানানো হচ্ছে চিতই পিঠা। সন্ধ্যার পরেই পিঠার দোকানে ভিড় করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পিঠার দোকান সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। অনেকে আবার পিঠা বিক্রির দোকান দিয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন।
মহানগরীর রূপসা ঘাট, পিটিআই মোড়, দোলখোলা মোড়, গফফারের মোড়, শিশু হাসপাতাল রোড, তারের পুকুর পাড়, পিকচার প্যালেস মোড়, ক্লে রোড, মহারাজ চত্বর রোড, স্টেশন রোড, কদমতলা রোড, খান জাহান আলী রোড, সোনাডাঙা বাস স্ট্যান্ড, মোল্লা বাড়ির মোড়, নিউ মার্কেট, খালিশপুর, দৌলতপুর, রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার মোড় আর ফুটপাতে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক অস্থায়ী পিঠার দোকান।
মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীরা মোড়ে মোড়ে পিঠার দোকান নিয়ে বসে পড়েছেন। আর সাধারণ মানুষও খাচ্ছেন এসব ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা।
দোকানিরা জানান, খুব বেশি পুঁজি লাগে না বলে সহজে এ ব্যবসা শুরু করা যায়। জ্বালানি হিসেবে লাকড়ি, অকেজো কাঠের টুকরা, কিংবা গাছের শুকনো ডাল ব্যবহার করছেন তারা। তবে কেউ কেউ আবার পিঠা তৈরি করতে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। কিছু গুড়, আটা, নারকেল নিয়ে এ ব্যবসায় খুলে বসা যায়।
সোনাডাঙা মোল্লা বাড়ির মোড়ের পিঠা বিক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, পাটিসাপ্টা, পুলি, চিতই, খিজানো পিঠা ও তেলের পিঠা বিক্রি করেন তিনি। দামে কম ও মান ভালো হওয়ায় দোকানে প্রায় ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে।