চাঁদপুরের মাছ বাজারগুলোতে ইলিশ বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এছাড়া জেলেরা ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ নিয়ে আসছে চাঁদপুর মাছঘাটে।
এদিকে নদীতে বেশি ইলিশ মাছ ধরা পড়ায় মাছের আড়ত ও বাজারগুলোতে গত দুই থেকে তিন দিন ধরে দাম কমের দিকে।
ইলিশ মাছের দাম কমায় ইলিশ প্রিয় ভোজন রসিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।
আরও পড়ুন: গবেষণা করে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়ানো হবে: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজির ইলিশ মাছ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এছাড়া ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় এবং ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়া ছয় থেকে সাত দিন আগেও এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হতো ২ হাজার ৫০০ টাকায়।
জেলা শহরের ব্যস্ততম বিপনীবাগ মাছ বাজারের মাছ বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন মিজি, সাজাহান সরদার, জাকির হোসেন, জলিল মিয়া ও আ. হামিদ বাবু জানান, এসব ইলিশ চাঁদপুরের পদ্মার ও দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা ভোলার, চরফেশন, হাতিয়া, লালমোহন, নোয়াখালী বরগুনা ও স্বন্দীপের। এছাড়া পাল বাজার, নতুনবাজার, পুরানবাজার, ওয়ারলেসবাজার, বাবুরহাট, বহরিয়া, আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে একই দামে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
শহরের পুরানবাজারের গরিব-দুঃখীদের বাজার নামে খ্যাত ‘বউ বাজারে’ একটু নরম বা রিজেক্টেড ইলিশ মাছ সস্তায় (৩০০/৪০০/৫০০ টাকা) পাওয়া যায়।
মাছ ব্যবসায়ী আ. সোবহান, নুরুল ইসলাম, মোস্তফা খান ও খোকন মিয়া জানান, চাঁদপুরে ঝকঝকে সাদা পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ খুব কম। বলতে গেলে ১০ শতাংশ। এদিকে শনিবার সারাদিনে প্রায় ১০০ মণ পদ্মার ইলিশ আমদানি হয়েছে এ মাছ ঘাটে।
মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত সরকার বলেন, এখনো ইলিশের সিজন শুরু হয়নি। শুরু হবে ঈদের পরে। তাছাড়া, এখন বৃষ্টি নেই। তাই নদীর স্রোত কম, স্রোতের উল্টোদিকে ইলিশ বেশি বেশি আসে, নদীতে এখানে সেখানে চর জেগেছে, নদীর পানির গভীরতা কম, তাই সাগর থেকে ইলিশ স্রোতের উল্টাদিকে এদিকে (চাঁদপুরের দিকে) তেমন আসছে না। নদীর পানির নিচে চর জেগে উঠায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ইলিশ ওদের বিচরণের পথ পাল্টেছে।
মুন্সীগঞ্জের ব্যাংক অফিসার মিরাজুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, তিনি স্ত্রী ও সন্তানসহ চাঁদপুরে নদীর মোহনায় সারাদিন ঘুরেছেন এবং টাটকা ইলিশ দিয়ে দুপুরে ভাত খেয়েছেন। বিকালে চারটি টাটকা ইলিশ কিনে ফিরছেন সন্ধ্যার লঞ্চে।
মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবেবরাত সরকার বলেন, শনিবার সারাদিনে মাছ ঘাটে প্রায় ৫০০ মণ ইলিশ মাছ এসেছে দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা থেকে। চাঁদপুরের পদ্মা নদীর মাছ খুবই কম। সারাদিনে প্রায় ১০০ মণ ইলিশ মাছ ঘাটে এসেছে। দাম কেজি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
একজন ইলিশ বিক্রেতা বলেন, দক্ষিনাঞ্চলীয় জেলা থেকে ইলিশ মাছের আমদানি বাড়লে পদ্মার ইলিশের দাম আরও কমবে।
চাঁদপুরের ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, এবার ইলিশের সিজন এখনো শুরু হয়নি। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ইলিশ বেশি পরিমাণে পাওয়া যাবে। নদীকে বাঁচাতে হবে। পরিকল্পিত ড্রেজিং করতে হবে, নদী থেকে যত্রতত্র বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নদীর পানির দূষণ রোধে বাস্তব পরিকল্পনা জরুরি। নদী দূষণে ইলিশ মাছ স্বস্তি পায় না, ফিরে যায়। বৃষ্টি কম হলে নদীর পানির গভীরতাও কম থাকে। ইলিশ তো গভীর পানির মাছ।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে ১০৬ মণ ইলিশ ও জাটকাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ জব্দ