স্থানীয়রা বলছেন, বিষাক্ত মদপানে তারা মারা গেছেন। তবে পুলিশ বলছে, বিষাক্ত মদপানে কারও মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মৃতরা হলেন- উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আবুল গাজীর ছেলে হাবিল গাজী (৬০), বর্নি গ্রামের সুরত আলীর ছেলে ফারুক হোসেন (৪০), হাজিরালী গ্রামের মৃত গহর আলীর ছেলে আসমত আলী (৫০), পুরন্দরপুর গ্রামের মৃত ফকির ধোপার ছেলে হামিদুর রহমান (৫৫), রাজাপুর গ্রামের আলফাজের ছেলে নুর ইসলাম খোকা (৫৫) এবং ঋষিপাড়ার মৃত রসিকলালের ছেলে নারায়ণ (৫৫)।
আরও পড়ুন: করোনায় বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪১,৪৩৯
গুরুতর অসুস্থ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, সোমবার সকালে পুরন্দরপুর গ্রামের জলিল সর্দারের ছেলে মিন্টুর কাছ থেকে মদ কিনে খোকা, নারায়ণ ও হামিদুরের সাথে তিনিও পান করেছিলেন। কিন্তু তিনি পরিমাণে কম পান করেন। তিনি চলে আসার পরও খোকা, নারায়ণ ও হামিদুর মদের আস্তানায় ছিলেন। বাড়িতে ফেরার পর তিনিসহ ওই তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের যশোরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খোকা, হামিদুর ও নারায়ণ ওই দিনই মারা যান। সোমবার গভীর রাতে খোকা, হামিদুরকে দাফন ও নারায়ণকে সৎকার করা হয়।
একদিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাবিল গাজী, ফারুক হোসেন ও আসমত আলী মারা যান। মৃত ব্যক্তিদের সবাইকে হাসপাতাল থেকে ‘হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে’ বলে ছাড়পত্র দেয়া হয় বলে দাবি করছেন মদের আখড়ায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া ওই ব্যক্তি।
অল্প সময়ের মধ্যে এতো মানুষের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার রাতে ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রাজ্জাক, ইনসপেক্টর (তদন্ত) মেজবাউর রহমান, সেকেন্ড অফিসার এসআই দেবব্রত দাসসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা মৃতদের বাড়িতে যান। মৃতরা সবাই হৃদরোগে মারা গেছেন বলে তাদের পরিবার-সদস্যরা দাবি করেন। ওই সময় তারা হাসপাতালের ছাড়পত্রও দেখান।
ঝিকরগাছা থানার ওসি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি মৃতদের বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছি। তারা সবাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে আত্মীয়-স্বজনরা বলছে। সেই মর্মে তারা মেডিকেল ছাড়পত্রও দেখিয়েছে। চিকিৎসক যদি হৃদরোগে মৃত্যুর ছাড়পত্র দেন, তাহলে আমি কীভাবে বলি তারা বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে মারা গেছে?’
ওসি আরও বলেন, ‘মৃত ফারুকের স্ত্রী আমাকে বলেছে, তার স্বামী ৭-৮ মাস ধরে অসুস্থ ছিল। এই অসুস্থতার কারণে সে মারা গেছে। ওই সময় তার নববিবাহিত মেয়েও সেখানে ছিল।’
মৃত খোকার ছেলেও পুলিশকে জানিয়েছেন, তার বাবা অসুস্থতাজনিত কারণে মারা গেছেন।
তবে মৃতদের মধ্যে হাবিল মদের কারবারি ছিলেন বলে নিশ্চিত করেন থানার ওসি।
কয়েক মাস আগে তাকে এই কারণে গ্রেপ্তারও করা হয়।
ওসি বলেন, হাবিলের ছেলে আমাকে বলেছে, বাবা মদ বা বিষাক্ত কিছু খায়নি। অসুস্থতার কারণে মারা গেছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডা. জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘ওই ছয়জনের মধ্যে কেউ হাসপাতালে মারা যায়নি। তবে বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া তিনজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
ইউএনবির সাথে কথা বলার সময় ঝিকরগাছা হাসপাতালে ২৫ থেকে ২৮ বছর বয়সী একজন ভর্তি হতে আসেন। এই যুবকের বিষয়ে ডা. জিয়াউল বলেন, ‘এই লোক সন্ধ্যায় একবার বমি নিয়ে এসেছিল হাসপাতালে ভর্তি হতে। কিন্তু তখন কিছুটা ভালো বোধ করায় বাড়ি ফিরে গেছে। এখন আবার মরণাপন্ন অবস্থায় এসেছে। অ্যালকোহলিক পয়জনিংয়ের শিকার গুরুতর অসুস্থ যুবককে হয়তো যশোরে রেফার করা হবে।’
তারা যে বিষাক্ত বা ভেজাল মদপানে অসুস্থ হয়েছেন, তা কীভাবে বুঝলেন?
এবিষয়ে জিয়াউল বলেন, ‘আমাদের এখানে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা নেই। তবে ওই চারজনই মদপানের কথা স্বীকার করেছে। হাসপাতালের রেজিস্টারেও সেভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে।’
এর আগে এপ্রিলে যশোর শহর ও শহরতলী, মণিরামপুর এবং চৌগাছায় বিষাক্ত বা ভেজাল মদপানে প্রায় দেড় ডজন মানুষের মৃত্যু হয়। ওই সময় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে হাসান নামে এক মদের কারবারির দোকানে অভিযান চালিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অবৈধ মদের কারবারি হাসানের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ পাঁচটি মামলাও হয় সেই সময়।