বরিশাল নগরীতে রাস্তায় প্রকাশ্যে শিশু গৃহকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মিজানুর রহমানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে। গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে কোতোয়ালি মডেল থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। তবে নির্যাতনকারী কারো নাম জানাতে পারেনি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর চৌমাথা বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুনঃ গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে রাজধানীতে দম্পতি আটক
নির্যাতনের শিকার শিশু গৃহকর্মীর নাম মনি (১১)। সে বাবুগঞ্জ উপজেলার মন্টু হাওলাদারের মেয়ে।
শিশু গৃহকর্মী অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রুপাতলী এলাকায় ডিবির পরিদর্শক মিজানুর রহমানের বাসায় কাজ করতেন। এ সময় তাকে প্রায়ই বকাঝকা করা হতো। এ কারণে সে আজ বাসা থেকে পালিয়ে যায়। এরপর নগরীর চৌমাথা এলাকায় তাকে ধরেন মিজানুর রহমানের স্ত্রী। এ সময় তিনি রাস্তায় প্রকাশ্যে তাকে মারধর করেন। এ সময় তার ছেলেও চর থাপ্পর দেয়।
আরও পড়ুনঃ সিলেটে জোড়া খুন: ‘গৃহকর্মীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন শিক্ষিকা’
প্রত্যক্ষদর্শী রফিকুল ইসলাম হাওলাদার জানান, মেয়েটি চৌমাথা বাজারের সামনের রাস্তা পার হইতেছিলো। এর মধ্যে এক মহিলা ও এক ছেলে শিশু মাইয়াডার হাত ধইরা টান দেয় এবং ওরে মারা শুরু করে। এই সময় মাইয়াডা চিল্লাইয়া কইতে থাহে যে মুই আমনেগো লগে যামু না, ওই বাসায় মইরা গেলেও যামু না। হেই সময় লোকজন জমা হইয়া যায় এবং শিশুটিকে মারার কারণ জানতে চায়। পাশাপাশি মারধরকারী ওই মহিলা ও ছেলেকে পুলিশে দেয়ার কথা কইলে পুলিশের মায়রে বাপরে তুইলা গালাগালি করে।‘
আরও পড়ুনঃ সৌদিতে কর্মরত নারী গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা চায় বাংলাদেশ
মমতাজ নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘মানুষ মানুষরে এমনে পিডাইতে পারে না। ওরা জানোয়ার। গরীব মারলে তো আর বিচার হইবে না। হেরা বড় মানুষ। ওই পোলায় জানাইছে হের বাপেও ডিবির বড় অফিসার।’
অভিযুক্ত মহিলার স্বামী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, তিনদিন আগে শিশুটির মা বাবা আমাদের বাসায় রেখে যান। আমার স্ত্রী অসুস্থ। আজ সকালে সে রিপোর্ট দেখানোর জন্য বাইরে বের হয়েছে। আমি বাসায় একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এই সুযোগে শিশুটি ঘরের বাইরে বের হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ ৯৯৯ এ ফোন কলে দগ্ধ গৃহকর্মী উদ্ধার, আটক ১
১২ বছরের শিশু তার বাসায় কি কারণে রেখেছেন প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, শিশুটি অসহায় হওয়ায় তার মা আমার বাসায় দিয়ে গিয়েছিলেন। আমার সন্তানদের সঙ্গী হিসেবে থাকতো শিশুটি। তাকে গৃহকর্মী হিসেবে রাখা হয়নি।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, শিশুটির সাথে কথা বলেছি। ৬দিন আগে সে ওই বাসায় কাজ শুরু করেছে। সেখানে বকাঝকা করায় মেয়েটি ক্ষুদ্ধ হয়ে বাসা থেকে আজ সকালে বের হয়ে যায়। পরিদর্শকের পরিবারের লোকজন খুঁজতে বের হয়, ঘটনাস্থলে এসে শিশুটিকে পেলে তারা বাসায় নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু মেয়েটি না যেতে চাইলে টানা হেচড়া হয়, যে বিষয়টি দৃষ্টিকটু। এরপর পুলিশ খবর পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়। শিশুটি বর্তমানে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রয়েছে, তার পরিবার এসে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। তবে নাম জানতে পারেনি ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের।
আরও পড়ুনঃ সৌদি থেকে ৬ মাসের সন্তান নিয়ে দেশে ফিরলেন গৃহকর্মী
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, যেহেতু শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেহেতু শিশুটিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। ভিকটিমের জবানবন্দি ও বাবা মায়ের অভিযোগ সব কিছু শুনেই ঘটনার তদন্ত করে যা সামনে আসবে সেভাবেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন সবার জন্য সমান। এই ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।