ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটে ব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়া ও চর্মরোগসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ। হাসপাতালগুলোতে বেড়েই চলেছে রোগীর সংখ্যা। শয্যা সংকটে মেঝে, বারান্দা, সিঁড়ি ও গাছতলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। অন্যদিকে ধারণক্ষমতার প্রায় ১০ গুণ বেশি রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন ফেনী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক। এছাড়া রোগীদের কারও ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়, সিঁড়িতে বা হাসপাতালের সামনে গাছতলায়।

আরও পড়ুন: শেরপুরে চিকিৎসক-নার্স সংকট, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে ১৭ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭৬ জন। আরেকটি ওয়ার্ডে ২১ শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা ৮০ জন। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডেও ২৬ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৩৬ জন। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতাল আঙিনা ও বাহিরে গাছতলায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, ফেনী জেলার ৭টি হাসপাতালে এ পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ৪৭ হাজার ৯৩০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসা নিয়েছেন ১০ হাজার ৭৫৪ জন। এর ভেতর ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৪৯৮ জন, সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা এ পর্যন্ত ২২৫ জন। হাসপাতালগুলোতে নতুন ভর্তি ৫২৪ জন, এরমধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত ১৮৬ জন। বর্তমানে হাসপাতালে রোগী আছেন ৯১৩ জন।

উপজেলাগুলোতে দেখা যায়, সোনাগাজীতে ৬১০ জন, পরশুরামে ৫৩৬ জন, ফুলগাজীতে ৩১৪ জন, ছাগলনাইয়ায় ১ হাজার ২৭২ জন, দাগনভূঁঞাতে ৬৩০ জন ও ফেনী সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৭৯০ জন চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ঈদে চিকিৎসাসেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সাম্মী বলেন, ফেনীতে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে বাড়তি ২১ শয্যার আলাদা ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। অতিরিক্ত রোগীর বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছি। এ সময়ে তাঁবুর তৈরি অস্থায়ী হাসপাতাল করা গেলে সেবা দিতে সুবিধা হবে।

সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন বলেন, রোগীর চাপ সামলাতে চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর ও পার্শ্ববর্তী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসককে আনা হয়েছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ রোগী আসছে, তাদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বসার জায়গা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে গেছে। ওষুধ নেই, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভাগও বন্ধ। তারপরও আমরা দিনরাত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

ফেনী জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, জেলায় সরকারিভাবে ৫টি মেডিকেল ক্যাম্প ও ২২টি মোবাইল টিম চালু রয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ৮টি টিম ও ১৩টি সিভিল টিম দ্বারা মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: রমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস মেশিন বিকল, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত