বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা সাজেকে করোনার পাশাপাশি হঠাৎ করে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৭৮ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আর সাজেক ইউনিয়নকে ম্যালেরিয়ার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি সেবা সংস্থা ব্রাকের হিসাব মতে, সাজেকের ৯নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়া, বড়ইতলী পাড়া, শিব পাড়া, দেবাছড়া, নরেন্দ্র পাড়া, ১নং ওয়ার্ডের মন্দির ছড়া, শিয়ালদহ, তুইচুই, বেটলিং, অরুন কার্বারী পাড়াসহ আশপাশের সব এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
সাজেকের ৭নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়ায় একই পরিবারের তিনজন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা (নয়ন)।
আরও পড়ুন: সাজেকে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাস খাদে, আহত ৮
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইশতেখার আহমদ জানান, গত বছরের তুলনায় এই বছরে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর লকডাউনের কারণে বাঁশ কর্তন ও জুম চাষ বন্ধ ছিল। এ বছর তা বন্ধ না থাকায় ও বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গল সৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রুব বেড়ে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে।
এনজিও সেবা সংস্থা ব্রাকের হিসাব মতে, এই বছর জুন মাস পর্যন্ত দশ হাজার সন্দেহজনক রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে ৬৭ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই ৪৯ জনের রক্তে ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক মাসে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ২৯ জন।
ডা. ইশতেখার আহম্মেদ জানান, হিসাব মতে উপজেলায় মোট ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৭৮ জন। দুর্গম সাজেক ইউনিয়নকে আমরা ম্যালেরিয়ার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছি। যেখানে ২০১৯ সালে ২৮ হাজার মানুষের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ১,৩০৬ জনের শরীরে ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়। এছাড়া গত বছর ২৮, ৬৬৭ জন মানুষের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮৯ জনই ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। তবে এটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা ব্রাকের হিসাব মতে।
তিনি জানান, সাজেকে আমাদের কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক করার পরিকল্পনা আছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে সাজেকসহ আশপাশের জনগণকে খুব সহজে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে। তবে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজারের রামুসহ ম্যালেরিয়া প্রবণ জেলাগুলোতে ‘মাইক্রো প্ল্যান’ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারের ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্রাকের রাঙ্গামাটির কো-অরডিনেটর হাবিউর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: সাজেক সড়কে পর্যটকদের গাড়িতে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের হামলা, আটক ৩
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর একটানা বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মশার প্রজনন বেড়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে পাহাড়ের বিভিন্ন ঝিরি ও ছড়ায় পানি জমে মশার প্রজননে সুবিধা হয়। এ ছাড়া ভারতের মিজোরাম রাজ্যে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে সেখান থেকেও ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি সন্ধ্যা থেকে মশারি ব্যবহার, আশপাশের ঝোপঝাড় ও নর্দমা পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেন এবং তিনি আরো আশঙ্কা করছেন, পর্যটন এলাকা হওয়ায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকলে এক সময় পর্যটকদের মাধ্যমে সারা দেশে ম্যারেরিয়ার জীবানু ছড়াতে পারে। তাই ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্য সকলে সচেতন হয়ে আশপাশের এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।