২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। গণমাধ্যমে এমন খবর আসার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) বিকালে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয় এবং ১২ ঘণ্টার মধ্যে বাজারের দৃশ্যপট পাল্টে যায়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১৫০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ২০০-২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশের মতো খুলনায়ও ভারতীয় এবং দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে।
নগরীর সন্ধ্যা বাজার, নিউ মার্কেট, জোড়াকল বাজার, বয়রা বাজার, গল্লামারী, ট্রাক টার্মিনালের পাইকারী আড়ৎ ঘুরে দেখা যায় খবর প্রচার হওয়া মাত্রই একটি সিন্ডিকেটের কালো থাবা পড়েছে বাজারে। এলাকার বাজার ঘুরে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবর জানা গেছে।
জানা গেছে, শুক্রবার সকালেই নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত। যা গত সপ্তাহেও ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।
এছাড়াও পাবনার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ টাকা করে।
তবে শুক্রবার সন্ধ্যার পরই পাল্টে যায় পেঁয়াজের বাজারের দৃশ্যপট।
বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি করে।
মূলত দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ভারত সরকার আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার খবর সন্ধ্যার মধ্যেই পৌঁছে যায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের কানে।
এরপরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেন।
আরও পড়ুন: ৯ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন সরকারের
ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা খবর পেয়ে পেঁয়াজ কিনতে বড় বাজারে আসেন সরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলাম।
দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সন্ধ্যার দিকেই দেখেছি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে, তখনই বুঝতে পারলাম দেশেও দাম বেড়ে যাবে। তাই দ্রুত বাজারে চলে এলাম, কিন্তু এসে দেখি আগেই দাম বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ দুই দিন আগেও ১০০ টাকা কেজি কিনেছি, শনিবার কিনতে হয়েছে ১৫০ টাকা করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর ব্যাপারে খুবই দক্ষ। কোনো একটা ঘোষণা আসার আগেই অটোমেটিক দাম বেড়ে যায়। ভারত আজ ঘোষণা দিয়েছে, তাই বলে আজই দাম বাড়িয়ে ফেলতে হবে?
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সন্ধ্যা বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে বেশি দামেই পেঁয়াজ আনতে হচ্ছে। যার কারণে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশি।
তিনি আরও বলেন, শনিবার আবার শুনেছি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে, তাহলে তো পেঁয়াজের বাজারে আরও অস্থিরতা তৈরি হবে।
দেশি পেঁয়াজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজের সিজন শেষ, যে কারণে দামটা একটু বেশি। তবে আগামী ১৫ দিন পরই বাজারে নতুন পেঁয়াজ চলে আসবে, আশা করি দেশিটার দাম তখন কমে যাবে।
বিক্রেতা রাকিব মিয়া বলেন, গত দুই দিনের বৃষ্টিতে কৃষকের পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। যার কারণে নতুন পেঁয়াজ এলেও দাম তেমন একটা কমবে না। এছাড়া বাজারে সব জিনিসেরই তো দাম বেশি। পেঁয়াজের দাম কমবে কী করে?
শুক্রবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে অন্যান্য দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত।
এর আগে গত ২০ আগস্ট ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির উপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যার ফলে স্থানীয় বাজারে মূলত মশলা হিসেবে ব্যবহৃত পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে লক্ষাধিক মেট্রিক টন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রত্যাশা