সোমবার দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত রংপুরের-বুড়িরহাট সড়কে বিক্ষোভ করেন তারা।
আরও পড়ুন:রংপুরে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু
বিক্ষোভ করার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজনের হামলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় সিহাব নামে এক শিক্ষার্থীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও রোদের মধ্যে সড়কে বসে দীর্ঘ সময় বিক্ষোভ করায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরও আট শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন:রংপুরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ: এএসআই গ্রেপ্তার
বিক্ষোভের সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, টানা ২৩ দিন ধরে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানোসহ রাজধানীতে গিয়ে মানববন্ধন ও রংপুরে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগে আরও জানান, নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে শিক্ষক ও হাসপাতাল নেই। বাংলাদেশ মেডিকেল ডেন্টাল কাউন্সিল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না থাকা স্বত্ত্বেও ৩ শতাধিক দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে কলেজ চালালেও এখন পর্যন্ত অনুমোদন আনতে পারেননি। ধার করা রোগী ও শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস করছে কর্তৃপক্ষ। হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:রংপুরে গৃহকর্মীকে ধর্ষণের দায়ে একজনের যাবজ্জীবন
এ সকল সমস্যা নিরসনে অন্য মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাইমিন আহমেদ ইমন বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।’
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিলা সৌরভ রিতু বলেন, টানা ২৩ দিন ধরে আন্দোলন ও দাবির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দাবি আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
এর আগে সকাল ১১টার দিকে বিভিন্ন দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. খলিলুর রহমানের কাছে গেলে তিনি কোনো কথা না বলে কলেজ ছেড়ে দ্রুত পালিয়ে যান। এ সময় শিক্ষার্থীদের সাথে অধ্যক্ষের অনুসারীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এদিকে সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ শোনেন। পরে তাদেরকে সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করাসহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থানে অনড় থাকেন।
নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশীদ জানান, নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে মাইগ্রেশনসহ বেশ কিছু দাবিতে আন্দোলন করছেন। এদের মধ্যে ভারত ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীও রয়েছেন। সোমবার তারা একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
ওসি আরও জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এদিকে বেলা আড়াইটার দিকে জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের অনুরোধে সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসের ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে হাসপাতালের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
এ সময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) আলতাফ হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। আপাতত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।