বরগুনার তালতলী উপজেলার আগাপাড়া এলাকার দুই যমজ মেয়ের লাশের পর এবার নদীতে ভেসে এলো তাদের মা শিমু আক্তারের লাশ। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর বুধবার দুপুরে সুগন্ধা নদীতে তার লাশ ভেসে উঠে। খবর পেয়ে শিমুর ভাই হান্নান গিয়ে তার বোনের লাশ শনাক্ত করেন।
বুধবার সন্ধ্যায় ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
এদিকে, শিমুর লাশ তার দুই যমজ কন্যার কবরের পাশেই দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দাফনের কাজ সম্পন্ন করে।
আরও পড়ুন: লঞ্চে আগুন: বাবা-মেয়ে দগ্ধ, বাঁচতে পারেনি মা
জানা গেছে, বরগুনার তালতলী উপজেলার আগাপাড়া এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে শিমু তার দুই যমজ মেয়ে লামিয়া-সামিয়া ও মা দুলু বেগমকে নিয়ে ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনা আসার জন্য এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে রওয়ানা দেন। লঞ্চে ওঠার পরে শিমু তার বৃদ্ধ বাবা আব্দুল আজিজ হাওলাদারের কাছে ফোন করে বাড়ি আসার খবর জানায়। সকালে বৃদ্ধ বাবার কাছে খবর আসে ওই লঞ্চেই আগুন লেগেছে।
লঞ্চে আগুনের ঘটনায় আব্দুল আজিজের দুই নাতনি পুড়ে মারা গেছেন। তাদের লাশ পেয়ে যথারীতি দাফন করেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকে তার মেয়ে শিমু নিঁখোজ ছিলেন। স্ত্রী দুলু বেগম (৫৫) হাসপাতালের আইসিউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এ দিকে শিমুর স্বামী রবিউল দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে হারিয়ে এখন দিশেহারা।
সাংবাদিকদের দেখে আব্দুল আজিজ হু-হু করে কেঁদে উঠে বলেন, ‘মোর নাতীর (নাতনী) পোড়া লাশের পাশে মাইয়াডার লাশ। এ করুণ অবস্থা চোহের সামনে কেমনে সই। এ কেমন বিচার করল আল্লাহ্। মুই কি ভুল হরছি আল্লাহ’র ধারে, যে হেই ভুলের জন্য আল্লাহ বড় শাস্তি দিল মোরে। এ কষ্ট মুই কেম্মে সমু।’ এ কথা বলে চিৎকার করতে করতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
আরও পড়ুন: চলন্ত লঞ্চে আগুন: বরগুনায় গণকবরে অজ্ঞাত ২৩ লাশ দাফন
শিমুর ভাই হান্নান বলেন, ‘প্রতিদিনই বোনের লাশের খোঁজখবর নিতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর ঘটনাস্থলে যেতাম। বুধবার জানতে পারি দুই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এমন সংবাদ পেয়ে ছুটে গিয়ে দেখি আমার বোনের লাশ মাটিতে পড়ে আছে। জেলা প্রশাসনের কাছে বোনের সকল তথ্য দিলে, প্রশাসন আমার কাছে বোনের লাশ বুঝিয়ে দিলে আমি বাড়িতে নিয়ে আসি।’
তালতলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. কাওসার হোসেন জানান, নিহতদের পরিবারকে দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।