বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মোখা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত মোখা শক্তিশালী হয়ে কক্সবাজারের দিকে এগিয়ে আসছে।
এ অবস্থায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য টেকনাফে এসেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ মিয়ানমারের উপকূল এবং এর আশেপাশের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: বৈরী আবহাওয়ায় সেন্টমার্টিনে আটকা তিন শতাধিক পর্যটক
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে ট্রলারযোগে দ্বীপ ছেড়ে টেকনাফ আসতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অনন্ত ২০০ পরিবারের দেড় হাজারের কাছাকাছি মানুষ দ্বীপ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে এর মধ্যে কত সংখ্যক মানুষ দ্বীপ ছেড়ে টেকনাফ চলে এসেছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান বলা যাচ্ছে না। তবে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। দ্বীপে ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে কাজ করছেন।
সেন্টমার্টিনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, মোখা আসছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কারণ, সেন্টমার্টিনে নেই পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র। দ্বীপের চারপাশে টেকসই বেড়িবাঁধ নেই। খাদ্য গুদাম নেই। চিকিৎসাসেবা নেই। সি অ্যাম্বুলেন্স নেই। আবহাওয়া অফিসের কার্যক্রম নেই।
তাই সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ নিজে ও নিজের পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্বীপ ছেড়ে নিরাপদ স্থলে ছুটে যাচ্ছে।
এদিকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে। শুক্রবার (১২ মে) সকাল থেকেই কক্সবাজারের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। এছাড়া দুপুর ২ টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন থেকে ৭ লাখ ইয়াবা উদ্ধার: কোস্টগার্ড
স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, মোখা কক্সবাজার উপকূলের কাছাকাছি। সাগর কিছুটা উত্তাল হয়েছে। মোখার প্রভাবে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। বাতাসের তীব্রতা বাড়বে। ফলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং পাহাড়ে বসতিগুলো ঝুঁকিতে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, সিডর ছাড়া গেল ১৫ বছরে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি কক্সবাজারে। এবার মোখা কক্সবাজার অভিমুখী হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
মোখার প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে আগে থেকেই পাহাড় ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, মোখার কারণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সব উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
জেলার উপকূলীয় এলাকার সাইক্লোন শেল্টার ও বিদ্যালয়সহ ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
১০ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা, ৪৯০ মেট্টিক টন চাল, সাত মেট্টিক টন শুকনো খাবার ও ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন মজুদ রাখা হয়েছে। দ্বীপ অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তায় আমরা সব সময় সজাগ আছি। আতঙ্কের কোন কারণ নেই ।
দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোখা আরও উত্তর দিকে অগ্রসর এবং ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ