প্রথমে তারা দক্ষতার সঙ্গে আফগানিস্তানকে মাত্র ১৫৬ রানে অলআউট করে। তারপর তারা ছয় উইকেট হাতে রেখে জয় ছিনিয়ে আনে। এভাবেই বাংলাদেশ তাদের আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩ অভিযানে একটি দারুণ সূচনা করেছে।
ধর্মশালায় এই জয় দিয়ে বিশ্বকাপের ঠিক আগে দলকে ঘিরে থাকা বিতর্কগুলো উড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ সবসময়ই এমন একটি সূচনা চেয়েছে, যা টুর্নামেন্টের বাকি অংশের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি চ্যালেঞ্জিং প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রমাণিত একটি দলের বিরুদ্ধে ছয় উইকেটের জয়ের মাধ্যমে উড়ন্ত সূচনা করল বাংলাদেশ। ২০১১ সালের পর আবার উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ এটি।
ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাদের আগের সিরিজে বাংলাদেশ বিতর্কের মুখে পড়েছিল।
তৎকালীন অধিনায়ক তামিম ইকবাল ফিটনেস-সম্পর্কিত বিতর্কের মধ্যে সেই সিরিজে হঠাৎ অবসর ঘোষণা করেছিলেন, যার ফলে ঘরের মাঠে সিরিজ হারতে হয়েছিল টাইগারদের।
সুতরাং, আজকের ম্যাচের আগে বাংলাদেশকে সেই স্মৃতি নিয়েই লড়াই করতে হয়েছিল। যদিও তারা বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি দারুণ রেকর্ড করেছে।
ক্রিকেটের সর্বশ্রেষ্ঠ মঞ্চে তাদের শেষ দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছিল।
আরও পড়ুন: আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩: আফগানিস্তানকে ১৫৬ রানে থামিয়ে দিল বাংলাদেশ
বোলাররাও দেখিয়েছে তারা যেকোনো চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত। টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান প্রথম উইকেট জুটিতে ৪৭ রান সংগ্রহ করেন।
দশম ওভারের আগেই বল হাতে তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
এরপর সাকিব ইব্রাহিমকে আউট করে আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে দেন।
১০০ রান করার আগেই আফগানিস্তান আরেকটি ধাক্কা খেয়েছে।
তারপরে, বাংলাদেশের বোলাররা যা করেছে তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। এর জেরে আফগানিস্তান ১৫৬ রানে তাদের সব উইকেট হারিয়ে ফেলে।
রহমানুল্লাহ ৪৭ রান করে দলীয় সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন। তবে অন্যরা বাংলাদেশের সুনিয়ন্ত্রিত বোলিং আক্রমণে টিকে থাকতে পারেনি।
মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান তিনটি করে এবং শরিফুল ইসলাম দুটি উইকেট শিকার করেছেন।
এই ম্যাচে ব্যাট হাতেও নজর কেড়েছে বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান তামিম ও তৌহিদ হৃদয় দুজনেই এবার তাদের বিশ্বকাপ অভিষেক করেছেন। তারা দুটি করে ক্যাচ নিয়ে আফগানিস্তানকে স্বল্প রানে অলআউট করতে টাইগারদের সহায়তা করেছেন।
১৫৬ রানের জবাবে বাংলাদেশ সপ্তম ওভারে মাত্র ২৩ রানে দুই ওপেনারকে হারায়।
আরও পড়ুন: আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩: আফগানিস্তানের বিপক্ষে বল করছে বাংলাদেশ
লিটন দাস একটি কভার ড্রাইভ করার চেষ্টা করলে তানজিদ রানের জন্য রওনা হন। লিটন তানজিদকে তার ক্রিজে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন, তানজিদ তা মেনেও চলেন, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। রান আউট হন তিনি।
এর কিছুক্ষণ পরই ফিরে যান লিটন। আরেকবার তিনি বলটিকে কভার অঞ্চলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বলটি তার স্টাম্প ভেঙে দেওয়ার আগে তার ব্যাটে ইনসাইড এডজ হয়।
তবে, দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মিরাজ একটি দুর্দান্ত জুটিতে ১২৯ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করেন। এই জুটিই কার্যত ম্যাচটিকে টাইগারদের পক্ষে নিয়ে যায়।
মিরাজকে তার সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা করে ব্যাটিং অর্ডারে উপরের দিকে আনা হয়েছিল। এশিয়া কাপে প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।
আফগানিস্তান কিছুটা লুজ ফিল্ডিং করেছে। তারা অন্তত মিরাজের দুটি ক্যাচ মিস করেছে। একটি পয়েন্টে নজিবুল্লাহ জাদরানের এবং আরেকটি মুজিব উর রহমানের বাউন্ডারি লাইনে।
এর মাশুল দিতে হয়েছে আফগান বাহিনীকে। এই দুই লাইফ পেয়ে মিরাজ ফিফটি করেছিলেন। বল হাতে তিন উইকেট শিকার এবং ব্যাট হাতে একটি ফিফটি করায় ম্যাচ সেরা ঘোষণা করা হয় মিরাজকে।
এই ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্ট্যান্ডে তার সঙ্গী শান্তও একটি হাফ সেঞ্চুরি করেন এবং নাভিন-উল-হকের বলে পরপর দুটি চারে ম্যাচটি শেষ করেন।
৯২ বল বাকি থাকতে ৩৪ দশমিক ৪ ওভারে ১৫৭ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। শান্ত ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
আফগানিস্তানের মূল স্পিনার রশিদ খান প্রায়ই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু আজ তিনি জ্বলে উঠতে পারেননি। তিনি ৯ ওভারে ৪৮ রান দিয়েও কোনো উইকেট পাননি।
আগামী ১০ অক্টোবর একই ভেন্যুতে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। মূল ইভেন্টের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে বৃষ্টি বিঘ্নিত হারে বাংলাদেশ। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিশ্চিত জয়ের পর সেই ম্যাচটি তাদের পেছনে ফেলতে আগ্রহী হবে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩: বাংলাদেশ–আফগানিস্তান ম্যাচ লাইভ