রাজধানীতে উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের বড় একটি অংশের পছন্দ বেইলি রোডের সারি সারি রেস্টুরেন্টে সাজানো নানা পদের ইফতার আইটেম। সরেজমিনে ইফতারের আগ মুহূর্তে এলাকাটি ঘুরে দেখা যায়, স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় শতাধিক ইফতার পণ্যের দোকান গড়ে উঠেছে বেইলি রোডে।

দশ টাকার চপ থেকে শুরু করে এই এলাকার ইফতারির দোকানগুলোতে হাজার টাকার ওপরে অহরহ ইফতার আইটেম বিক্রি হচ্ছে। নামজাদা রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে একেবারে স্ট্রিট কার্টের খাবারেও মানুষের উপচেপড়া ভিড়।

বেইলি রোডের নওরতন কলোনির বাসিন্দা রোহান বলেন, এই এলাকার রেস্টুরেন্টগুলো মূলত মধ্যবিত্তের জন্য। মধ্যবিত্ত যেমনি ১০ টাকার পেঁয়াজু বা আলুর চপ খায়, আবার হাজার টাকার বাকলাভাও ভালোবাসে, তাদের এই পাঁচমিশালি চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এ এলাকায় রমজানে রেস্টুরেন্টগুলোতে ইফতার আইটেমগুলো সাজানো হয়।

বেইলি রোডে গত চার রমজান ধরে অস্থায়ী কার্টে ইফতার বিক্রি করেন হাবিব। বলেন, ‘আশপাশে প্রচুর শপিং মল থাকায় এই এলাকায় ইফতারের আগে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। ইফতারের ১০-১৫ মিনিট আগেই মোটামুটি সব পণ্য বিক্রি হয়ে যায়।’

আরও পড়ুন: বিনা লাভে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছেন চাঁদপুরের শাহ আলম

এখানে ইফতার কিনতে আসা মানতাশা বলেন, ‘আশেপাশে যাদের বাসা তারা মোটামুটি ভালো মানের ইফতারের জন্য বেইলি রোডকেই বেছে নেয়। ট্রেডিশনাল ইফতারের বাইরেও এখানে অনেক মুখরোচক খাবার বিক্রি হয়। ঢাকার অন্যান্য এলাকায় ইফতারের সময় শাহী টুকরা বা দুধ পুলির মতো পিঠা পাওয়া যায় না। কিন্তু বেইলি রোডে হেন কিছু নেই যে কিনতে পাওয়া যায় না।’

বেইলি রোডের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের বিক্রয়কর্মী মোক্তার বলেন, আইটেম যতই থাক না কেন, সবচেয়ে বেশি চাহিদা জিলাপি আর হালিমে। অন্যান্য এলাকার হালিমে মাংসের বদলে হাড্ডি বা চার্বি বেশি থাকে। বেইলি রোডে ভালো মানের হালিমের বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গরুর গর্দান বা সামনের পায়ের মাংসে হালিম রান্না হয়। এতে করে হালিমে নরম মাংস পাওয়া যায়।

জিলাপির প্রসঙ্গে মোক্তার বলেন, বেশি চাহিদা ঘিয়ে ভাজা বোম্বাই জিলাপির । প্রতি কেজি ৫০০ টাকা করে এই জিলাপি বিক্রি হচ্ছে। অনেকে আবার ডালের আমিত্তি কিনছেন। আর চিকন জিলাপির চাহিদা বরাবরই ভালো।

অনেকে আবার ইফতারিতে তেহারি এবং খিচুরির মতো ভারী খাবার বেছে নিচ্ছেন। ফুল প্লেট তেহারি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দরে আর গরুর মাংসের খিচুরি ২৫০ টাকা দরে।

বড় বড় দোকানের বাইরে রাস্তার পাশের কার্টে সাসলিক, চপ আর লুচির চাহিদা তুঙ্গে। ৭০ টাকায় সাসলিক আর ১০ টাকার লুচি দিয়ে অনেকেই করছেন ইফতার শেষে পেট পূজা।

ভিকারুননিসা স্কুলের সামনে সাসলিক বিক্রেতা আজাদ বলেন, ইফতারের আগে প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকার খাবার বিক্রি হয়। যে ক্রেতা এখানের ফাইভ স্টার থেকেও খাবার কিনছেন, সেই একই ক্রেতাই আবার রাস্তার পাশ থেকেও কিনছেন। মূলত খাবারের স্বাদের জন্য ক্রেতারা স্থানের তারতম্য করেন না।

অনেকে বেইলি রোড থেকে ইফতার কিনে বাসায় কিংবা অফিসে নিয়ে গেলেও, অনেকে আবার রেস্টুরেন্টে বসে ইফতার করাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ইফতার পার্টিতেও পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে বেইলি রোড। যারা রেস্টুরেন্টে বসে ইফতার করতে চান তাদেরকে আগেই টেবিল বুকিং দিতে হয়।

আরও পড়ুন: সৌহার্দ্য সম্প্রীতির মেলবন্ধনে জাবিতে গণ-ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

তবে খাবার যেখানেরই হোক বা যেখানে বসেই খাবার খাওয়া হোক না কেন, ক্রেতাদের প্রত্যাশা খাবার যেন হয় স্বাস্থ্যকর। পুরনো তেল, কৃত্রিম রঙ এবং পচা-বাসি খাবার এড়াতে অনেকেই ভরসা করেন রাজধানীর বেইলি রোড এলাকার ইফতার আইটেমের ওপর।