পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ হারায় ব্যবধান কমাতে নিজেদের ম্যাচটি জেতার প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছিল বার্সেলোনা। তবে কাঙ্ক্ষিত সেই জয় পেতে রীতিমতো ঘাম ছুটে গেছে লামিন-রাফিনিয়া-লেভানডোভস্কিদের।

রবিবার কাতালুনিয়ার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে দেপোর্তিভো আলাভেসের বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতেছে হান্সি ফ্লিকের দল। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন রবের্ট লেভানডোভস্কি।

এদিন মাঠে নেমেই ফুটবলের পাশাপাশি শারীরিক সামর্থ্য দিয়ে বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের অস্বস্তিতে রাখে আলাভেসের ফুটবলাররা। পুরোটা সময় সেই চ্যালেঞ্জ ধরে রাখে তারা। ফলে বল পায়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পাস দেওয়া তো দূরের কথা, পজেশন ধরে রাখাই মুশকিল হয়ে পড়ে কাতালান জায়ান্টদের। সেইসঙ্গে বল কেড়ে নিয়ে বার্সার রক্ষণে ত্রাস ছড়ানো তো ছিলই। ফলে গোলের সুযোগ তৈরি করতে হিমশিম খেতে হয় ফ্লিকের শিষ্যদের।

আলাভেসের চ্যালেঞ্জ সামলে ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই প্রথমবার গোলের সুযোগ তৈরি করে বার্সেলোনা। সতীর্থের কাছ থেকে আসা পাস ধরে ড্রিবলিং করতে করতে এগিয়ে গিয়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের সামনে থেকে বাঁ দিকে কিছুটা ফাঁকায় থাকা রাফিনিয়াকে পাস দেন লামিন। বল ধরে বক্সে ঢোকার মুখে জোরালো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করেন রাফিনিয়া, তবে বল সামান্যের জন্য বাইরে দিয়ে চলে যায়।

আরও পড়ুন: এস্পানিওলে ধরাশায়ী রিয়াল মাদ্রিদ

পঞ্চদশ মিনিটে উড়ন্ত পাসে হেড করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বার্সা মিডফিল্ডার গাভি ও আলাভেস উইঙ্গার তমাস কোনেচনিকে। এর দুই মিনিট পর কাতালানদের বিপদে ফেলেই দিয়েছিল আলাভেস। তবে শটটি পোস্টের ধারেকাছেও রাখতে পারেনি তারা।

আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ শেষে ৪২তম মিনিটে আরও একবার আশা জাগানিয়া শট নেন পেদ্রি। তবে সেই শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন আলাভেস গোলরক্ষক হেসুস ওউয়োনো।

গোলশূন্য প্রথমার্ধ শেষে বিরতির পর কন্ট্রোলিং মিডফিল্ড থেকে মার্ক কাসাদোকে উঠিয়ে অভিজ্ঞ ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং এবং হলুদ কার্ড পাওয়া ডিফেন্ডার রোনালদ আরাউহোকে উঠিয়ে এরিক গার্সিয়াকে নামিয়ে দেন ফ্লিক। ফ্রেঙ্কির দক্ষতা ও সতীর্থদের সঙ্গে অসাধারণ সমন্বয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ভোল পাল্টে ফেলে বার্সেলোনা।

প্রতিপক্ষের সৃষ্টি করা সব ধরনের প্রতিকূলতা এড়িয়ে একের পর এক আক্রমণে উঠতে থাকে তারা। এ সময় থেকে আরও ক্ষিপ্র হয়ে মাঠে আলো ছড়াতে থাকেন লামিন ইয়ামালও। একপ্রকার অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন তিনি।

এরই ধারাবাহিকতায় ৫৭তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ট্যাকল সামলে বক্সের ভেতরে দুর্দান্ত এক ক্রস দেন লামিন, লাফিয়ে উঠে তাতে জোরালো হেডও করেন লেভানডোভস্কি, তবে বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি। দুই মিনিট পর লামিনের আরও একটি ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন তার দুই সতীর্থ।

৬১তম মিনিটে নিজেই এবার বাঁকানো শট নেন ১৭ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ প্রতিভা, তবে লাফিয়ে উঠে হাত দিয়ে কোনোমতে তা পোস্টের ওপর দিয়ে ঠেলে জাল অক্ষত রাখেন ওউয়োনো। তবে এর কয়েকমূহূর্ত পর আর পেরে ওঠেননি এই গোলরক্ষক।

৬২তম মিনিটে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক লামিনের শট ক্লিয়ার করায় পাওয়া কর্নার থেকে ছোট পাসে বাঁ পাশের সাইড লাইনের কাছে থাকা পেদ্রিকে বল দেন গাভির বদলি নামা ফেরমিন। এরপর বল ধরেই বিপরীত পাশে বক্সের মধ্যে থাকা রাফিনিয়াকে পাস বাড়ান তিনি। উড়ন্ত সেই পাসে এক ভলিতেই দূরের পোস্টের দিকে বাড়ান এই ব্রাজিলীয়, আর তা থেকে ট্যাপ-ইনে জালে বল জড়িয়ে দেন গোলপোস্টের কোনায় থাকা লেভা।

এ নিয়ে লিগে চলতি মৌসুমে তার গোলসংখ্যা হলো ১৮টি। আর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৩০ বা তার বেশি গোল করলেন এই পোলিশ স্ট্রাইকার। শুধু তা-ই নয়, একুশ শতকে লা লিগায় সবচেয়ে কম ম্যাচে ৬০ গোল করায় তৃতীয় খেলোয়াড় (৯০ ম্যাচে) বনে গেলেন তিনি। এই রেকর্ডে তার উপরে রয়েছেন কেবল ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো (৬১) ও লুইস সুয়ারেস (৬৬)।

আরও পড়ুন: পাঁচ বছরেও গেতাফের মাঠে জিততে পারল না বার্সেলোনা

গোল পেয়ে আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে বার্সেলোনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই মিনিট পর একই কায়দায় আরও একটি গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা, তবে এবার সফল হতে পারেনি ফ্লিকের শিষ্যরা।

ম্যাচের ৭৬তম মিনিটে ফেরমিনকে দিয়েও একইভাবে গোল করানোর চেষ্টা করেন লামিন, তবে এগিয়ে গিয়েও বল ধরতে ব্যর্থ হন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।

বাকিটা সময়ও আলাভেসের ওপর ছড়ি ঘোরালেও গোল করার মতো সুযোগ আর তৈরি করতে পারেনি বার্সেলোনা। ফলে ১-০ গোলের জয়ে সন্তুষ্ট থেকেই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।

এই জয়ে ২২ ম্যাচে ১৪ জয় ও ৩ ড্রয়ে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানেই রইল বার্সেলোনা। তবে গতরাতে এস্পানিওলের বিপক্ষে হারায় চূড়ায় থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে (৪৯) তাদের পয়েন্ট ব্যবধান কমে চারে এসেছে। সমান ম্যাচে ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদ।

লা লিগায় বার্সেলোনার পরবর্তী ম্যাচ ভালেন্সিয়ার বিপক্ষে, তাদের মাঠে। আর ওই রাতেই মাদ্রিদ ডার্বিতে মুখোমুখি হবে রিয়াল-আতলেতিকো।