পাওনা অর্থ নিয়ে প্যারিস সেন্ত জার্মেইর (পিএসজি) সঙ্গে আপস করতে রাজি নন গত দলবদল মৌসুমে ফ্রি ট্রান্সফারে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া তারকা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে।
বেতন ও বোনাস নিয়ে সাবেক ক্লাবের সঙ্গে বিরোধের অবসানে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ফরাসি ফুটবল লিগের আইনি কমিশনের দেওয়া মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন এই সুপারস্টার।
জটিলতা নিরসনে এমবাপ্পে কমিশনের সহযোগিতা চাওয়ার পর তাদের উপস্থিতিতে প্যারিসে পিএসজি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ডের প্রতিনিধিরা। পিএসজির কাছে ৫৫ মিলিয়ন ইউরো পাওনা রয়েছে বলে দাবি এমবাপ্পের।
এক বিবৃতিতে তার প্রতিনিধিরা বলেছেন, তাকে তিন মাসের বেতন দেয়নি পিএসজি। এছাড়া আনুগত্য বোনাসের শেষ কিস্তিও পরিশোধ করেনি ক্লাবটি। এসব বিষয়ে কমিশনকে জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কমিশন এ বিষয়ে (পিএসজির সঙ্গে) মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়। তবে এমবাপ্পের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ মধ্যস্থতা করতে গেলেই পাওনা অর্থের পরিমাণ কমে যাবে।’
আরও পড়ুন: এমবাপ্পের বেতন-বোনাস আটকে দিয়েছে পিএসজি
তবে বুধবার দুই ঘণ্টার শুনানির পর কমিশনের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে পিএসজি।
এক বিবৃতিতে ক্লাবটি পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্যারিসে অসাধারণ সাতটি বছর কাটানোর সময় এমবাপ্পে বারবার প্রকাশ্যে ও ক্লাব কর্তাদের কাছে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অবশ্যই তার সম্মান করা উচিত।
পিএসজির দাবি, ক্লাবের কাছে এমবাপ্পের কোনো অর্থ পাওনা নেই। ২০২৩-২৪ মৌসুমের শুরুতে তাকে যখন স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া হয়, তখন পুনরায়ে স্কোয়াডে ফিরতে তিনি তার (পাওনা) বোনাস ত্যাগ করেন।
পিএসজির এক মুখপাত্র বলেন, ‘কমিশন এখন মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া বিবেচনার জন্য তাকে (এমবাপ্পে) আমন্ত্রণ জানিয়েছে। খেলোয়াড়ের প্রতিনিধিরা এখন কী ব্যবস্থা নেবেন তা জানি না।’
তবে বর্তমান অচলাবস্থা চলতে থাকলে বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কর্মসংস্থান আদালতে গড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইউরোপীয় শিরোপা জিতে রিয়াল মাদ্রিদ অধ্যায় শুরু এমবাপ্পের
গত মৌসুমে গভীর উত্তেজনার মধ্যে পিএসজির সঙ্গে এমবাপ্পের সম্পর্কের অবসান ঘটে। ২০২২ সালে নতুন চুক্তিতে সই করার সময় এমবাপ্পেকে ক্লাবের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের চুক্তির প্রস্তাব দেয় পিএসজি, কিন্তু লিওনেল মেসি, নেইমারদের মতো মহাতারকাদের ছেড়ে দেওয়ায় হতাশ হন এমবাপ্পে। এর মাধ্যমে ক্লাব তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি বলে অভিযোগ ছিল তার।
এমনকি নতুন চুক্তিতে সই করার সময় ২০২৫ সালের জার্সি হাতে সমর্থকদের সামনে বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলারকে উপস্থাপন করা হয়। অথচ মূল চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৪ সাল পর্যন্ত, আরেক বছর বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছিল নতুন চুক্তিতে। এই নিয়েও এমবাপ্পে বিরক্ত ছিলেন জানা যায়।
এরপর গত বছরের জুনে পিএসজিকে চমকে দিয়ে এমবাপ্পে জানান, ওই এক বছরের জন্য তিনি চুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছেন না। সে সময় বিনামূল্যে ছাড়ার আশঙ্কায় তাকে দলবদলের বাজারে তোলার চেষ্টা করে পিএসজি। তবে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার কথাবার্তা একপ্রকার পাকা হয়ে যাওয়ায় অন্য কোনো ক্লাব তার দিকে হাত বাড়ায়নি।
এরপর সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল হিলালের ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন ২৫ বছর বয়সী এই মহাতারকা। একপর্যায়ে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পিএসজির প্রাক-মৌসুম সফর থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এছাড়া মূল দলের অনুশীলন থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় এমবাপ্পেকে, এমনকি মৌসুমের প্রথম ম্যাচেও তাকে দলে রাখেনি ক্লাবটি।
পিএসজি সে সময় জানিয়েছিল, দুই পক্ষের অচলাবস্থা অব্যাহত থাকায় প্রথম লিগ ম্যাচ থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে ‘গঠনমূলক ও ইতিবাচক’ আলোচনা শেষে তাকে লাইনআপে ফেরানো হয়েছে।