ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১ উইকেটের কাঙ্খিত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। রবিবার মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ও দৃঢ়তায় আর সাকিব আল হাসানের বোলিং এ ধরাশায়ী হয়েছে ভারত।
১৮৭ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৩৬ রানেই ৯ম উইকেট হারায় টাইগাররা। তখনও প্রয়োজন ৫১ রান। উইকেটে তখন মেহেদী হাসান মিরাজ আর মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজকে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রেখে পারতপক্ষে সিঙ্গেল না নিয়ে মিরাজ আজ খেলেন এক অতিমানবীয় ইনিংস। আজকের ম্যাচের জয় স্বাগতিকদের সিরিজে এগিয়ে রাখবে।
২৭ বলের ব্যবধানে ১২৮ থেকে ১৩৬ পর্যন্ত রানে বাংলাদেশের ব্যাটাররা হতাশাজনক ব্যাটিং পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল। ৮ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দলের জন্য এই জয় তাই অপ্রত্যাশিত ছিল।
কিন্তু প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে স্বাগতিকদের স্মরণীয় জয়ে নেতৃত্ব দেন মিরাজ ও মুস্তাফিজুর।
মিরাজ ৩৯ বলে ৪টি চার ও দুটি ছক্কায় ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। ১১ বলে ১০ রান করে অপরাজিত থাকেন মুস্তাফিজও।
১৮৭ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ৯৫ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে শুরুটা মন্থর করে। লিটন দাস টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৩ বলে ৪১ রান করেন, আর নাজমুল হোসেন শান্ত প্রথম বলেই আউট হন।
এরপর বিজয় ও অধিনায়ক লিটন ২৬ রানের পার্টনারশিপ গড়েন।
তবে বিজয় তার সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি, অবশেষে ২৯ বলে ১৪ রান করে আউট হন। ২৯ রান করে ওয়াশিংটন সুন্দরের দ্বিতীয় শিকার সাকিব আল হাসান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ বনাম ভারত ওয়ানডে: সাকিবের স্পিন দক্ষতায় ১৮৬ রানে অল-আউট ভারত
পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম টাইগারদের পথ দেখালেও ৬৯ বলে ৩৩ রান যোগ করতে সক্ষম হন তারা।
তাদের অতি-ধীরগতির ব্যাটিং বাংলাদেশকে বড় সমস্যায় ফেলেছিল। ৩৫ তম ওভারের শেষ বল এবং ৩৬ তম ওভারের প্রথম বলে এই অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার আউট হলে চাপ আরও বেড়ে যায়।
এরপর আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের মধ্যে একটা জুটির আশা করছিল সমর্থকেরা।
আফিফ হোসেন ৬ রানে অভিষেককারী কুলদীপ সেনের বলে আউট হয়ে গেলেও শেষ বিকালে ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য দৃঢ়তা দেখান মিরাজ।
তিনি সাহসিকতার সঙ্গে তার লক্ষ্যে অবিচল থাকেন এবং বলতে হবে ভাগ্য আজ তার সাহসের পক্ষে ছিল। কারণ ভারতীয় উইকেটরক্ষক যখন মেহেদীর একটি ক্যাচ মিস করেন, এটিই ছিল বাংলাদেশের জয়ের টার্নিং পয়েন্ট ।
মিরাজের এই লাইফের কল্যাণেই বাংলাদেশ আজ ৪৬ ওভারেই ১৮৭ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় এবং অবশেষে এক উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় পায়।
১০ ওভারে ৩২ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়ে ভারতের বোলারদের মধ্যে সেরা ছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। কুলদীপ ও ওয়াশিংটনও দারুণ বোলিং পারফরম্যান্স দেখান এবং প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
এর আগে কারিশমা দেখায় তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তিনি ভারতের বিরুদ্ধে তার প্রথম পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
ভারতীয় ব্যাটারদের কেউ লাইনের ভেতর থেকে সাকিবের মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করেন, কেউ লাইনের বাইরে চলে যান। কিন্তু সাকিবের দক্ষ বোলিং মোকাবিলা করা তাদের জন্য সহজ ছিল না।
বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব তার প্রথম ওভারেই ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং তাদের তারকা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির উইকেট তুলে নেন।
সাকিব আজ ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপকে শাসন করেন এবং তার সপ্তম ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে ওডিআইতে ভারতের বিরুদ্ধে সেরা বাঁহাতি স্পিনারের পারফরমেন্সের রেকর্ড করেন।
এর মধ্যদিয়ে সাকিব সাবেক ইংলিশ স্পিনার অ্যাশলে গাইলসকে ছাড়িয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সেরা বোলিং ইনিংসের রেকর্ড গড়েন।
২০০২ সালে দিল্লিতে ৫৭ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন গাইলস।
সাকিব একটি সোজা ডেলিভারি দিয়ে রোহিতকে অবাক করে দিয়ে তার উইকেট তুলে নেন। ৩১ বলে ২৭ রান করে ফেরেন রোহিত। একই ওভারে সাকিবের আরেকটি বলে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত ওয়ানডে অধিনায়ক লিটন দাস তার ডানদিকে লাফিয়ে পড়ে বিরাট কোহলির উইকেট শিকারে সাহায্য করেন। এই অবিশ্বাস্য ক্যাচটি মিরপুরের দর্শকরা বহু বছর মনে রাখবে। বিরাট স্পষ্টতই লিটনের অসাধারণ ফিল্ডিং দক্ষতায় বিস্মিত হয়েছিলেন। অবশেষে ১৫ বলে ৯ রান করে ঘরে ফেরেন কোহলি।
ডানহাতি পেসার এবাদত হোসেন ৪৭ রানে ৪টি উইকেট নেন। যা তার সংক্ষিপ্ত ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা।
বাংলাদেশের বোলিংয়ের সামনে শুধুমাত্র লোকেশ রাহুল কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তিনি ৭০ বলে পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কার সাহায্যে ৭৩ রান করেন।
আরও পড়ুন: ওয়ানডেতে আবারও মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত