শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে ‘প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষায় সম্মিলিত আন্দোলন’র ব্যানারে বিপন্ন এশিয়ান হাতি রক্ষায় মানববন্ধন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা আন্দোলনের সহযোগী সদস্য আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ। অনুষ্ঠানটি সমন্বয় করেন বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম মিঠু।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে সার্কাসের অসুস্থ হাতির মৃত্যু
মানববন্ধন ও গণঅবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বন্যহাতির প্রাকৃতিক চলাচলের পথ, খাবার ও পানির উৎস রক্ষায় গহীন বনের প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ, হাতির নিরাপত্তা ও অভয়ারণ্যসহ বনে পর্যাপ্ত খাদ্য শৃঙ্খল গড়ে তোলার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, গেল এক বছরে দেশে প্রায় ২২টি বন্যহাতি মারা গেছে। এর মধ্যে চলতি মাসে মারা গেছে চারটি হাতি। মারা যাওয়া হাতিগুলোর বেশির ভাগই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃত হাতিগুলোকে গুলি করে, বিষ প্রয়োগ এবং বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এভাবে দেশে হাতি হত্যা ও মারা যেতে থাকলে শিগগিরই এ দেশ থেকে প্রাণীটি বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই হাতি সংরক্ষণকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারা বলেন, ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হাতি সংরক্ষণের উদ্যোগগুলোর কার্যকারিতা নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে সংরক্ষণ কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে, তাহলেই ভবিষ্যতে হাতি সংরক্ষণ সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বৈদুতিক ফাঁদে পড়ে বন্য হাতির মৃত্যু
শ্রীবরদীর পাহাড়ী জনপদ থেকে মৃত বন্যহাতি উদ্ধার
বাংলাদেশ বনবিভাগ ও প্রকৃতি-প্রাণী সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা- আইইউসিএনের সর্বশেষ ২০১৬ সালের হাতি জরিপের তথ্য মতে, দেশে এশিয়ান বন্যহাতি রয়েছে ২৬৮টি। দেশের সীমান্তবর্তী পাঁচটি বনাঞ্চলে ৯৩ পরিযায়ী হাতি বিচরণ করে। এছাড়া সরকারি অনুমতিক্রমে দেশে পালিত হাতি রয়েছে ১০০টি। কিন্তু দিন দিন মারা যাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার এ সংখ্যা এখন কমছে।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর ‘স্বপ্ন’ পূরণ করতে হাতি কিনলেন কৃষক
মানববন্ধনে হাতি সংরক্ষণে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অব্যাহত বন্যহাতি হত্যা বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া এবং হাতি হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। বন্যহাতির প্রাকৃতিক চলার পথ, খাবার পানির উৎস গহীন বনের প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণসহ হাতির নিরাপত্তা ও অভয়ারণ্যসহ বনে পর্যাপ্ত খাদ্য শৃঙ্খল নিশ্চিত করা। বন্যপ্রাণী ও হাতির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা ও কর্তব্যে অবহেলার ঘটনা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ব্যর্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ সংশোধন করে হাতির বাণিজ্যিক ব্যবহার স্থায়ীভাবে বন্ধ করা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও প্রাণী কল্যাণ আইন যথাযথ কার্যকর করা।