রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত।
মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেয়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মহিউদ্দিনের করা এক আবেদনের (রিভিউ) পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার অবকাশকালীন চেম্বার আদালতের বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ৪ অক্টোবর এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে রিভিউ আবেদনটি আগামী ১৭ নভেম্বর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন।
এর আগে ৫ এপ্রিল রায় দেন আপিল বিভাগ তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুই জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রাখেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এই রায় দেন।
রায়ে তাহেরের একসময়ের ছাত্র,পরে বিভাগীয় সহকর্মী মহিউদ্দিন ও তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়।
জাহাঙ্গীরের ভাই শিবিরকর্মী আবদুস সালাম ও তার আত্মীয় নাজমুলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়টি ১৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্র হত্যায় ৪ জনের ফাঁসি, ২ জনের যাবজ্জীবন
এরপর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) পাশাপাশি সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আপিল বিভাগে আবেদন করেন। মহিউদ্দিনের আবেদনটি ৪ অক্টোবর চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত করেন।
আদালতে মহিউদ্দিনের পক্ষে আইনজীবী এস এম শাহজাহান শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম।
বৃহস্পতিবার মহিউদ্দিনের আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের সঙ্গে মহিউদ্দিনের সাজা কার্যকর স্থগিতের আবেদনও ছিল। চেম্বার আদালত সাজা কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত করে পুনর্বিবেচনার আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ১৭ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেছেন।
ফলে এই সময় পর্যন্ত মহিউদ্দিনের সাজা কার্যকর স্থগিত থাকবে।
অন্যদিকে জাহাঙ্গীরের আইনজীবী মো. তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে জাহাঙ্গীর ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহালের রায়ের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরের ভাই আবদুস সালাম পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেছেন। আবেদন দুইটি শিগগিরই চেম্বার আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
২০০৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরের ম্যানহোলে তাহেরের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় সেদিন তাঁর ছেলে সানজিদ আলভী আহমেদ মতিহার থানায় মামলা করেন।
মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। দুই জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এ ছাড়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা ২০০৮ ও ২০০৯ সালে আপিল করেন। আপিলের ওপর ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। অপর দুই আসামি সালাম ও নাজমুলকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে।
এসবের ওপর শুনানি শেষে ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় দেন। এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে তিন দণ্ডিত পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেছেন।