ভোট কারচুপি ও ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগে গাইনবান্ধা-৫ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছি যে ভোটগ্রহণে অনিয়ম হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রেই আমরা গোপনকক্ষে অবৈধ অনুপ্রবেশ লক্ষ্য করেছি।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, অবৈধভাবে (গোপনকক্ষ) প্রবেশ করে ভোটারদের ভোট প্রধানে হয়তো সহায়তা করছেন বা বাধ্য করছেন। এটা আমরা সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট দেখেছি যে ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। পোলিং এজেন্টদের পোশাকে প্রার্থীদের প্রতীক ছিল, যা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।’
তিনি (সিইসি) অবশ্য এ অনিয়মের জন্য কোনো প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে দায়ী করেননি।
সিইসি নির্বাচন বাতিলের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন যে জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ধারা ৯১ অনুসারে, ইসি যদি দেখতে পায় যে একটি নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না, তবে ইসি কিছু বা পুরা আসনে নির্বাচন বন্ধ করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘অনেক আলোচনা ও পর্যালোচনার পর আমাদের কাছে মনে হয়েছে কিছু প্রার্থী বিভিন্নভাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছেন।’
সিইসি বলেন, সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে ১৪৫টির মধ্যে ৫১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয় এবং দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
তিনি আরও বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলোতে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোলরুম থেকে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সেখানকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি।
আরও পড়ুন: আইন বলে দিবে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না: আইনমন্ত্রী
সিইসি বলেন, ‘আমরা ভেবে দেখেছি ৫১টি ভোটকেন্দ্রে ভোট কারচুপি হলে বাকি কেন্দ্রে নির্বাচনের সুষ্ঠু ফল পাওয়া যাবে না। ফলে আমরা পুরা গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বাতিল করেছি।’
পরবর্তী কর্মপন্থা সম্পর্কে সিইসি আইন পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন বিপত্তি সম্পর্কে সচেতন হয়েছে ইসি।’
গাইবান্ধা-৫ নির্বাচনে ব্যবহৃত সব ইভিএম সঠিকভাবে কাজ করেছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
সিইসি আরও বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয় সে বিষয়ে ইসির নির্দেশনা রয়েছে। নির্বাচনের সময় কোনো যান্ত্রিক সমস্যা হয়নি, সব ইভিএম ঠিকঠাক কাজ করেছে। সমস্যাটি মানুষের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। এই অপকর্মের জন্য কারা দায়ী তা খুঁজে বের করতে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত প্রয়োজন।’
আরপিওর ৯১ (ক) ধারা অনুযায়ী, জবরদস্তি, ভীতি প্রদর্শন ও বল প্রয়োগসহ যেকোনো অনিয়মের জন্য যদি ইসি নিশ্চিত হয় যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না, তাহলে ইসি যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো ভোটকেন্দ্রে বা পুরা নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন বন্ধ করতে পারে।
সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন।
নির্বাচনে মাহমুদ হাসান রিপন (আওয়ামী লীগ), এএইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জু (জাতীয় পার্টি), অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম (স্বতন্ত্র), নাহিদুজ্জামান নিশাদ (স্বতন্ত্র) ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান (স্বতন্ত্র) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
গাইবান্ধা-৫ আসনে ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন।
২৩ জুলাই সাবেক সংসদ সদস্য ও একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ইন্তেকাল করলে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে ডিসি, এসপিদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকার নির্দেশ সিইসি’র
আইন বলে দিবে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না: আইনমন্ত্রী