মুজিববর্ষ উপলক্ষে জর্ডানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত ‘বেটারিং লেবার মোবিলিটি ফর বেটারিং ইন্টারকানেক্টিং ইকনমিস’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘অভিবাসন বিষয়ে কোনো দেশ একা কাজ করতে পারে না। দায়িত্ব ভাগাভাগি এবং পারস্পারিক সহযোগিতা অভিবাসন পরিচালনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার অভিবাসীদের মর্যাদার উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। একটি দক্ষ অভিবাসন প্রক্রিয়া অভিবাসী এবং স্থানীয় জনগণ প্রত্যেকের জন্যই সুযোগ তৈরি করতে পারে। এটি যে কোনো সীমানা অতিক্রম করে দেশ এবং মহাদেশগুলোর মানুষকে বিভিন্ন আঙ্গিকে সংযুক্ত হতে সহায়তা করে। তা সত্ত্বেও অনেক সময় বিশ্বব্যাপী ভীতি, নিয়ন্ত্রণ এবং সার্বভৌমত্বের শঙ্কার কথা বলে মানব গতিশীলতাকে বিতর্কিত বিষয়ে পরিণত করার চেষ্টা করা হয়। গ্লোবাল মাইগ্রেশন প্রশাসনের শক্তিশালী প্রবক্তা হিসেবে গ্লোবাল কম্প্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন (জিসিএম) বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং সুষ্ঠু মানব গতিশীলতার জন্য একটি কার্যকর কাঠামো স্থাপনের ওপর বাংলাদেশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।
বাংলাদেশের গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সংস্থা এবং সুশীল সমাজ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রশংসায় সৌদি কর্তৃপক্ষ
প্রবাসীদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনা
জর্ডানস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন এবং জর্ডান সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারুক আল হাদিদি, মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএফএম বোরহান উদ্দিন, জর্ডানে নিযুক্ত আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মিশন প্রধান তাজমা কুর্ট, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও-) দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শাবারিনাথ নায়ের এবং জর্ডানের আন্তর্জাতিক সংস্থা, মেডা’র (এমইডিএ) কান্ট্রি ডিরেক্টর আহসান উল হক হেলাল সংযুক্ত ছিলেন।
নাহিদা সোবহান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় একটি নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল অভিবাসন বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি অগ্রাধিকার বিষয়।
তিনি বলেন, শ্রম অভিবাসন অভিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি অভিবাসীর নিজের দেশ ও গন্তব্য রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তাই অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা ও মানসম্মত জীবন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সকলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশই একাধারে অভিবাসী প্রেরণকারী ও গন্তব্য রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ অভিবাসী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রায় ২.১ মিলিয়ন অভিবাসী রয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ব বাণিজ্যকে সুসংহত করতে হবে: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
শ্রম সংস্কারে বাংলাদেশ-ইইউকে একসাথে কাজ করতে হবে- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, নিরাপদ ও নৈতিক অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকার এককভাবে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসা অভিবাসী পুনরায় সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মানসম্মত অভিবাসন নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরিতে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
তিনি নিরাপদ এবং সুষ্ঠু অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য সকল অংশীজনের সহযোগিতার আহ্বান জানান।
জর্ডানের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, জর্ডান সব সময়ই অভিবাসীদের জর্ডানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। পেশাগত প্রয়োজনে ও শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করা সকল অভিবাসীর ক্ষেত্রেই জর্ডান সরকারের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
জর্ডানের অর্থনীতিতে বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জর্ডান পরস্পর নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারে। জর্ডানে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদার কারণে পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের প্রায় অর্ধেকের বেশিই বাংলাদেশি।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার একটি মুসলিম দেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। জর্ডানের প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এএফএম বোরহান উদ্দিন বলেন, অভিবাসন একটি স্বাভাবিক ও প্রয়োজন সাপেক্ষ বিষয়। মানুষ তার নিজেদের প্রয়োজনেই এই প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে। এই বিষয়টির সাথে অর্থনৈতিক বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিরাপদ ও পরিকল্পিত অভিবাসন প্রক্রিয়া অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনে। তবে অভিবাসীদের গন্তব্য রাষ্ট্রে তাদের জন্য সুরক্ষা ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।