স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের (আইভিআই) সহযোগিতায় দেশেই ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং বিশ্ব বাজারের জন্য স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১ টায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে আইভিআই-এর সদর দপ্তরে আইভিআই-এ বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যোগদান উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ও আইভিআই এর মধ্যকার সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড বিশেষত কলেরা, শিগেলা, অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল জাতীয় রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
আরও পড়ুনঃ ভ্যাকসিন বাণিজ্যে স্বচ্ছতার আহ্বান বাংলাদেশের
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা, দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা এবং আইভিআই-এর সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সরাসরি এবং অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির, আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বক্তব্য দেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তাঁর বক্তব্যে আইভিআই-এ বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সমর্থন প্রদানের জন্য আইভিআইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এছাড়া বাংলাদেশে ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়ন, ভ্যাকসিন প্রযুক্তি হস্তান্তর, বাংলাদেশের গবেষক ও চিকিৎসকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদানের জন্য আইভিআইকে তিনি ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আইভিআই-এর সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নতুন ভূমিকা আগামীতে বাংলাদেশ ও আইভিআই-এর মধ্যেকার সহযোগিতার সম্পর্ককে আরো বিস্তৃত ও সুদৃঢ় করবে।
আরও পড়ুনঃ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫ লাখ মানুষ ভ্যাকসিন পাবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
আইভিআই-এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান জর্জ বাইকারস্টাফ তাঁর স্বাগত বক্তব্যে আইভিআই প্রতিষ্ঠা চুক্তির প্রথম পর্যায়ের স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সদস্য প্রাপ্তিতে বাংলাদেশকে স্বাগত জানান। তিনি তাঁর বক্তব্যে নিরাপদ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন আবিষ্কার, উন্নয়ন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে বিগত দুই দশক ধরে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আইভিআই-এর সহযোগিতামূলক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আইভিআই-তে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জরুরী চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সহায়ক হবে এবং সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করবে।
রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বলেন, আইভিআই-এ বাংলাদেশের সদস্যপ্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত । তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আইভিআই-এ বাংলাদেশের সদস্যপ্রাপ্তি জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সংক্রামক ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আইভিআই-এর সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রোগমুক্ত বিশ্ব নিশ্চিতকরণে আইভিআই-এর কর্মসূচিকে পূর্ণ সমর্থন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই সদস্যপদটি বাংলাদেশে উন্নততর গবেষণা, ক্লিনিকাল বিকাশ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের টিকা তৈরির পথ সুগম করবে এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে মানবতার বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুনঃ দেশে আন্তর্জাতিক মানের ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট তৈরি করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
আব্দুল মুক্তাদির বাংলাদেশে ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন বিকাশ, কলেরা ভ্যাকসিন তৈরি, ইনসেপ্টা-এর সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সকল প্রকার সহযোগিতার জন্য আইভিআইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আইভিআই এবং আইসিডিডিআর,বির সার্বিক সহযোগিতা বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের টিক তৈরিতে ইনসেপ্টাকে সক্ষমতা প্রদান করেছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আইভিআই, বাংলাদেশের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং আইসিডিডিআর,বির মধ্যে যৌথ সহযোগিতার সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা হলে তা আগামীতে বিভিন্ন ধরনের টিকা তৈরি ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুনঃ ভ্যাকসিনের স্বত্ত্ব মওকুফের কথা ভাবছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা
ড. তাহমিদ আহমেদ তাঁর বক্তব্যে কলেরা টিকাসহ বিভিন্ন ধরনের টিকা তৈরির ক্ষেত্রে আইভিআই, আইসিডিডিআর,বি এবং বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতামূলক কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এরূপ সহযোগিতার সম্পর্ক ভবিষ্যতে করোনা টিকাসহ অন্যান্য রোগের টিকা তৈরিতে এবং ভাইরাসজনিত মহামারি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।