‘আদালত প্রাঙ্গণে মানুষের দুর্দশার সুযোগ নেয়া কখনোই বরদাস্ত করা হবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘আমি প্রত্যেক বিচারক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছি, সবার সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে। আদালত প্রাঙ্গণে মানুষের দুর্দশার সুযোগ নেয়া কখনোই বরদাস্ত করা হবে না।’
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত ১২তলা ভবন ‘বিজয় ৭১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি জানেন, বার (আইনজীবী সমিতি) এবং বেঞ্চ (আদালত) জুডিসিয়ারি নামক একটি পাখির দুটি ডানা। একটি শক্তিশালী বার, শক্তিশালী জুডিসিয়ারির জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের বর্তমান সংখ্যা ৯ হাজার ৩০২ জন। তাদের বসবার জায়গার সংকুলান বর্তমান বার বিল্ডিংগুলোতে একদমই অসম্ভব। তাদের বসবার এবং সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। এজন্যও বারের নতুন ভবন তৈরি করা একান্ত প্রয়োজন। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের সার্বিক মঙ্গলের জন্য আপনার গৃহীত পদক্ষেপ ও সুদৃঢ় অঙ্গীকার নিঃসন্দেহে আগামী প্রজন্মের পথচলায় পাথেয় হয়ে থাকবে। ’
আরও পড়ুন: দুর্নীতির বিষয়ে ‘নো কম্প্রোমাইজ’: প্রধান বিচারপতি
দেশের মুক্তি সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘অত্যাচারী শাসকশ্রেণির নিপীড়নে জর্জরিত জনতার সাম্য, গণতন্ত্র তথা ন্যায়বিচারের স্পৃহায় জেগে ওঠা উত্তাল আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম হয়েছিল আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের। মহান সংবিধানের চেতনা সমুন্নত রাখার সুদৃঢ় প্রত্যয়ে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মানসে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ। আজ বলতে গর্ব হয়, যে সকল বিচারপতি, আইনজীবী ও গুণীজনের নিষ্ঠা, প্রয়াস ও পদস্পর্শে ঋদ্ধ হয়েছে এই আদালত প্রাঙ্গণ। তাদের অনেকে আইন অঙ্গনেই শুধু নয়, পুরো বাংলাদেশের ইতিহাসজুড়ে তাৎপর্যময় অবদানের মাধ্যমে সমুজ্জ্বল হয়ে আছেন। তাদের গড়ে যাওয়া দৃষ্টান্তের ওপর ভর করে আজ প্রাণ পেয়েছে সুবিচারের এই সৌধ। ’
প্রধান বিচারপতি বলেন,‘সম্মানিত বিচারকগণ নিয়েছেন সততা, সাহসিকতা ও সমবেদনার দীক্ষা। সেই সঙ্গে সমর্থ হয়েছেন অগণন আলোচিত জনগুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদানে। বিচারকগণ সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন তাদের সততা, মেধা ও শ্রম দিয়ে মামলার জট ছাড়িয়ে দুর্দশাগ্রস্ত বিচারপ্রার্থীদের আদালত প্রাঙ্গণ হতে যতদ্রুত সম্ভব বাড়ি ফেরাতে।’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।
চার বছর আগে ২০১৮ সালের ৪ মার্চ একনেকে এই ভবনটি নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। ১৫৮ দশমিক ৫১৯ কোটি টাকা মূল্যের ভবনে থাকছে ৩২টি এজলাস তথা বিচার কক্ষ। বিচারপতিদের জন্য রয়েছে ৫৬টি চেম্বার। বেঞ্চ অফিসার, সহকারী বেঞ্চ অফিসার ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে ৫৬টি অফিস। থাকছে একটি করে ডে-কেয়ার সেন্টার, নামাজের স্থান ও গভীর নলকূপ। রয়েছে চারটি লিফট। ১২তলা এ ভবনে রয়েছে ১৬০০ কেভিএ সাবস্টেশন ও ৫০০ কেভিএ জেনারেটের। ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৪টি বিআরটিসি দোতলা বাস পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ও দুটি স্টোররুম রয়েছে।
আরও পড়ুন: আবারও ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় যেতে হবে: প্রধান বিচারপতি